বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ছয় মাসে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ সময়ে ১১টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় দুই শতাধিক বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৫২টি বিভিন্ন মামলায় ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানকালে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে— ইউজেটআই সাব মেশিন গান ১টি, পিস্তল ১টি, ওয়ান শুটারগান ৫টি, একনলা বন্দুক ২টি, রিভলবার ১টি, কার্তুজ ৩ রাউন্ড, গুলি ২৭ রাউন্ড, গুলির খোসা ৭টি, দেশীয় লোহার কিরিচ ১টি এবং ওয়াকিটকি সেট ১টি। এছাড়া পিস্তল সদৃশ গ্যাস লাইটার ১টি, পিস্তলের কাভার ৫টি, ট্যাকটিক্যাল বেল্ট ৫টি, নাইট্রেট ও সোডিয়াম পাউডার ২ বোতল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো উদ্ধার করা হয় একটি পিস্তল, ৫টি ওয়ান শুটারগান ও ২টি একনলা বন্দুক।
মাদকদ্রব্যের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৬৮টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ২ কেজি ৩০ গ্রাম গাঁজা, ২৪০ গ্রাম ইয়াবার গুঁড়া, ৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) এবং ১৩ লিটার ৭৫০ মিলিলিটার দেশীয় চোলাই মদ। এ সময় মাদক বিক্রির নগদ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এছাড়া অভিযানে উদ্ধার করা হয় ২৪টি হারানো মোবাইল ফোন, বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ৩০ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশি নগদ ১৪ লাখ টাকা।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রয়েছে। তাদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত, এজাহারনামীয় ও সন্দেহভাজন আসামিও রয়েছে।
এএপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, পানবাজার, ময়নারঘোনা, তাজনিমারখোলা, ঘোনারপাড়া, জামতলি, হাকিমপাড়া ও শফিউল্লাহকাটা পুলিশ ক্যাম্পের আওতায় ক্যাম্প-৮ (ই), ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯-এ এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সূত্র বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮ এপিবিএন এর পাশাপাশি আরও দুইটি ব্যাটালিয়ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন৷ কিন্তু এসব কাজের কোনো ফলাফল নেই বললেই চলে৷ তাছাড়া ৮ এপিবিএন ২৪ সালে একবছরে ইয়াবা উদ্ধার করেছিলো ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৯১ পিস সেখানে চলতি বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৭৫ হাজার ৬৮টি ইয়াবা উদ্ধার করে অনন্য স্থাপন করেছেন অধিনায়ক৷
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান অত্যন্ত সময়োপযোগী। এসব অভিযানের ফলে ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের মাধ্যমে সন্ত্রাসী চক্র দুর্বল হচ্ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে। এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অপরাধ দমনে ৮ এপিবিএনের এই ধারাবাহিক অভিযান প্রশংসনীয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে এবং এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক কারবার নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।ভবিষ্যতেও ক্যাম্পের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় কোনো অপরাধী চক্রকে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমি যোগদানের ৬ মাসে যে অভিযান পরিচালনা করেছি তা বিগত ১ বছরেও পরিচালনা করেননি৷ আমাদের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হবে৷