চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শিবির কর্মী মামুন হোসেনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার প্রধান আসামি তৎকালীন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মামুনুল হককে ফেনী পৌরসভার প্রধান নির্বাহী পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশর কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রশ্ন উঠে। এর আগে বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাস্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো.মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় শিবির কর্মী মামুন হোসেনকে। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মামুনুল হককে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার হাবিবুর রহমান রবিন, জালাল আহমেদ, রূপম বিশ্বাস, বোরহান উদ্দিন, বায়েজিদ সজল, এস এম আরিফুল ইসলাম, মনসুর সিকদার, সৌমেন পালিত, অমিত কুমার বসু’সহ মামুনুল হকের নেতৃত্বেই ক্যাম্পাসজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বগিভিত্তিক সাতটি সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্বও ছিল তার হাতে।
শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন, হল দখল, অস্ত্রবাজি, উন্নয়ন কাজের টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে তৎকালীন ভিসি আনোয়ারুল আজিম আরিফের নিয়োগ বাণিজ্যের অংশীদার হিসেবেও কাজ করতেন মামুনুল—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিল।
অভিযোগকারীরা আরও জানান, চবি শিক্ষক নিয়োগেও ‘মামুনুল হককে ম্যানেজ’ করতে পারলেই সুযোগ পাওয়া যেত। পরবর্তীতে রাজনৈতিক তদবিরে তিনি ৩৬তম বিসিএস-এ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। এরপর ঢাকার রমনা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রটোকল অফিসার ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও মামুনুল হকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক মন্তব্যে মামুনুল বলেন, “আমি ব্যক্তি মামুনকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাই চেনেন। আমি খারাপ কিছু করেছি কিনা যাচাই করুন। ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম—এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে কারও ক্ষতি করিনি, কোনো অপকর্মে ছিলাম না। রাজনীতি ছেড়ে আট বছর ধরে চাকরি করছি।”
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এত বড় মামলার আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র দুজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর মামলার ৫ নম্বর আসামি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল মনসুর সিকদারকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বাকিরা এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।”