অবশেষে ১০ মাস পর আগামীকাল (১ ডিসেম্বর) থেকে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হচ্ছে। শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ ভোরে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। যদিও প্রতিদিন মাত্র দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে ও রাত্রীযাপন করতে পারবেন। তাছাড়াও রয়েছে নানা বিধিনিষেধ।
সূত্র বলছে, সোমবার চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার অনুমতি পেয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অনুমোদনক্রমে প্রতিদিন সকাল ৭টায় উত্তর নুনিয়াছড়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং একইদিন বিকেল ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি যাত্রা করবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রীযাপনের সুযোগ রয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বাধিক দুই হাজার পর্যটককে দ্বীপে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে এবং দ্বীপের নাজুক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা সকল পর্যটককে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সুত্র মতে, পহেলা নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দেয় সরকার। তবে, সে সময় দ্বীপে রাতযাপনের অনুমতি ছিল না। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটের পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথও গত বছর থেকে বন্ধ ছিল।
জাহাজ পরিচালনাকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, প্রথম দিনের যাত্রার জন্য এরই মধ্যে দেড় হাজারের বেশি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
সুত্র মতে, ভ্রমণকারিদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড অনুমোদিত পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে সেন্টমার্টিনের ভ্রমণ পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট অবৈধ বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর সাংবাদিকদের জানান, এ মৌসুমের প্রথম যাত্রার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনা করে সবকিছু করা হবে।
তবে প্রতিবছর মৌসুমে অন্তত চারমাস দ্বীপে রাতযাপনের অনুমতি দিলে পর্যটন শিল্প আরো লাভবান হবে বলেও মন্তব্য করেন এই পর্যটন ব্যবসায়ী।
এদিকে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজুল ইসলাম মেম্বার সাংবাদিকদের জানান, দ্বীপ ঘিরে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও স্থানীয়রা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আগ্রহী। পর্যটন আমাদের প্রধান জীবিকার একটি উৎস। যত বাধাই থাকুক, এখানকার মানুষ সর্বোচ্চ আতিথেয়তা দেখাবে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, সেন্টমার্টিনে পর্যটকের রাতযাপন শুরু হলেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। দ্বীপের প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পর্যটকের সংখ্যা এবং ভ্রমণ সময় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সরকার পর্যটকদের জন্য যে সব নির্দেশনা দিয়েছে তাতে রয়েছে, রাতে সমুদ্রসৈকতে আলো জ্বালানো নিষিদ্ধ, শব্দ সৃষ্টি, বার-বি-কিউ আয়োজন, কেয়া বনাঞ্চলে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি এবং সামুদ্রিক প্রাণী যেমন- কচ্ছপ, পাখি, প্রবাল, কাঁকড়া, শাঁসসহ অন্যান্য প্রজাতিকে বিরক্ত করা নিষিদ্ধ।
এছাড়াও মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরণের মোটরচালিত যানবাহন সৈকতে নিষিদ্ধ থাকবে। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং চিপসের প্যাকেট, স্ট্র, ছোট সাবান/শ্যাম্পুর প্যাকেট, ছোট প্লাস্টিক বোতলসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারেও পর্যটক এবং স্থানীয়দের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ওই বিধিনিষেধে পর্যটকদের প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির ফ্লাস্ক বহন করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় দ্বীপের জীববৈচিত্র রক্ষা ও টেকসই পর্যটনে সহায়তার জন্য পর্যটকদের সহযোগিতা করতে হবে।