হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

শহিদুল-ডালিয়াচক্রের ফাঁদে ২৩২ বিনিয়োগকারী

কক্সবাজারের হোটেল সি প্রিন্সেস

আনছার হোসেন, কক্সবাজার

সাগরপাড়ে একখণ্ড জমি কিংবা ফ্ল্যাটের মালিকানা পেতে টাকা জমা দিয়েছিলেন ২৩২ জন বিনিয়োগকারী। তবে পুরো টাকা শোধ করার ১৪ বছর পরও তারা কোনো ধরনের মালিকানা বুঝে পাননি। এমনই ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত হোটেল সি প্রিন্সেসের মালিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

হোটেল সি প্রিন্সেসের বিনিয়োগকারীরা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। হোটেল প্রকল্পের স্যুট মালিকদের পক্ষে সফিউল আজম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল কবির, প্রফেসর ড. মুনিরা ইয়াসমিন, ড. অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ফরিদুল হাসান চৌধুরী, শফিকুল আজম সিদ্দিকী, সাঈদ ওসমান, মাকসুদুর রহমান স্বপন, কুতুব উদ্দিনসহ অন্তত ১০০ বিনিয়োগকারী নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

তারা জানান, হোটেল সি প্রিন্সেস মূলত ডেভেলপার কোম্পানি হোম স্টোনের একটি প্রকল্প। এ হোটেলের নির্মাণ ও বিক্রয় কাজের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকার ওয়ারির বাসিন্দা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহিদুল আলম ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডালিয়া আলম। তারা হোটেলের স্যুট বা ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিনিয়োগ আহ্বান করেন। তাতে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৩২ জন মানুষ প্রায় ৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। সাফকবলায় স্যুট/ফ্ল্যাট পেতে ২০১১ সালেই তারা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেসব ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি পাননি তারা।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শহিদুল আলম ও ডালিয়া আলমের প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়েছে সমুদ্র শহরের শত কোটি টাকার আবাসিক হোটেল প্রকল্পটি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে ইতোমধ্যেই আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের এমডি শহিদুল আলমের মৃত্যুর সুযোগে তার স্ত্রী ডালিয়া আলম ও তাদের দুই কন্যা সন্তান প্রেমা ও প্রীতি হোটেলটি স্যুট মালিকের অগোচরে অন্যত্র বিক্রির পাঁয়তারা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারী সফিউল আজম জানান, হোটেলটির যতটুকু নির্মাণ হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে তাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। এর বাইরে ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে আরো ৩০ কোটি টাকা ঋণ, যা সুদে-আসলে প্রায় ৮৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের সেই টাকা পরিশোধ না করে শহিদুল আলম সপরিবারে বিদেশ পাড়ি জমান ২০১৫ সালে। একই সময়ে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশের টাকা পাচার করেছেন বিদেশে।

আর নিজের আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে পরিচালনার মাধ্যমে হোটেলটি করায়ত্তে রেখেছেন তারা। এ অবৈধ কাজে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছেন বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও কক্সবাজার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়ার পর পরিস্থিতি ‘বেগতিক’ দেখে তারা একে একে সটকে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, হোটেল সি প্রিন্সেস প্রকল্পের প্রতারণায় সহযোগী হয়ে উঠেছে ‘অবৈধভাবে’ ঋণ মঞ্জুরকারী প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক! তারা যথাযথ যাচাই ছাড়াই শহিদুল আলমকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এমনকি চার কিস্তিতে ওই ঋণ বিতরণ করার কথা থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে দুই কিস্তিতে সম্পূর্ণ ৩০ কোটি টাকা শহিদুল আলমের হাতে তুলে দেয়।

নিয়মের ব্যত্যয় ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঋণ দেওয়ায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তা ও প্রতারক শহিদুল-ডালিয়া গংয়ের দুর্নীতির অনুসন্ধান করে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

সূত্র মতে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ইতঃপূর্বে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য হোটেল সি প্রিন্সেস তিনবার নিলামে বিক্রির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের বাধার কারণে তারা সফল হতে পারেনি। আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, হোটেলটি একতরফাভাবে বিক্রি করা যাবে না, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধানে যেতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহিদুল-ডালিয়াচক্রের বিরুদ্ধে ৮৩ জন ফ্ল্যাট মালিক কক্সবাজার অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছেন। একইভাবে ৩৯ জন ফ্ল্যাট মালিক রিয়েল এস্টেট আইনে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করেন। মামলাগুলো এখন বিচারাধীন আছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, ১১ তলা ভবনের মধ্যে কমন সার্ভিসের প্রথম ও দ্বিতীয় তলাসহ হোটেল স্যুটের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নির্মাণ করে হোটেল উদ্বোধন দেখিয়ে ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে হোম স্টোন। হোটেলের মোট ৩৬৮ কক্ষের মধ্যে অর্ধেকও প্রস্তুত হয়নি।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, গত আগস্টে মৃত্যুবরণ করা শহিদুল আলম ১১ তলা ভবনের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। অথচ কাউকে তিনি মালিকানা রেজিস্ট্রি দিয়ে যাননি। তবে কুতুবউদ্দিন নামের এক ভুক্তভোগী দাবি করেন, মালিকানা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস তাদের হাতে রয়েছে।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকাস্থ মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক ও ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল কাদের বলেন, আমাদের শাখা থেকে দীর্ঘদিন আগেই ঋণটি অনুমোদন করা হয়েছিল। ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মর্টগেজ (জামানত) দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকের যাচাইয়ে সবকিছু ঠিক থাকায় তখন ঋণটি অনুমোদন পায়।

তিনি বলেন, ব্যাংক চাইলে ঋণ আদায়ের জন্য বন্ধক দেওয়া জমি বিক্রি করার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে যারা অভিযোগ তুলছেন, তারা ঋণের ভাগিদার নন। তারা এ বিষয়ে ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারেন না।

তবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, শহিদুল আলম ঋণের আবেদন করেছিলেন। তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের পাশাপাশি হোটেল সি প্রিন্সেসসহ কক্সবাজারের আরো দুটি জমি জামানত দিয়েছিলেন। ওই জামানতের বিপরীতে ব্যাংক খেলাপিঋণ আদায়ে একটি জমি বিক্রি করে কিছু টাকা আদায় করেছে। কিন্তু হোটেল সি প্রিন্সেসের বিষয়টি আদালত মানবিক স্বার্থ বিবেচনায় স্যুট মালিকদের বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির চেয়ারম্যান ডালিয়া আলমের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি দেশের বাইরে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে শহিদুল আলমের ভাই তৌফিকুল আলম আমার দেশকে বলেন, ব্যাংক ও ক্লায়েন্টের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তবে আমাদের প্রথম টার্গেট পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করা।

আন্তর্জাতিক টেকনোলজিতে রূপ নেবে ‘ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল কলেজ’

বাহারের মেয়ে সুচির টাকায় মিছিল করতে এসে আটক ৪৪

বড় সাজ্জাদের অডিও প্রকাশের পর বাবলার ভাইয়ের কান্না

হত্যার আগে তাদের হুমকি দিয়েছিলেন রায়হান

যুবককে হত্যার ৯৯ দিন পর ব্যাগবন্দি মাথার খুলি উদ্ধার

উখিয়ায় পৃথক ঘটনায় তরুণ-তরুণী মরদেহ উদ্ধার

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

‘খালেদা জিয়া সামনে থাকলেও বাবলাকে মারতাম’ অডিওতে বড় সাজ্জাদ

‘নোয়াখালী বিভাগ চাই’ দাবিকে পূর্ণ সমর্থন করি: বুলু

আগামী নির্বাচন চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে: ডা. তাহের