কালের সাক্ষী ঝিনাইদহের কপোতাক্ষ তীরের খালিশপুরের নীলকুঠি অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংসের পথে। এ ঐতিহাসিক ভবনটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। জানা গেছে, ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যে এদেশে ইংরেজ শাসনের পতন হয়।
তৎকালীন যশোর, নদীয়া ও রাজশাহী অঞ্চলে তারা কুঠি স্থাপন করে নীল চাষ শুরু করে। সেসময় যশোর অঞ্চলে অনেকগুলো নীলকুঠি স্থাপিত হয়েছিল। নীল বিদ্রোহও শুরু হয়েছিল এ অঞ্চল থেকে। শৈলকুপার বিজুলিয়া নীলকুঠির ডাম্ভেল সাহেব ছিল খুবই অত্যাচারী। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ৫০ গ্রামের চাষিরা দেশি অস্ত্র নিয়ে কুঠি আক্রমণ করেছিল। কুঠিয়াল সাহেব পালিয়ে জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন।
কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের পর নীল ব্যবসায়ে ভাটা দেখা দেয়। নীলকরদের সাহেবরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে থাকে। এ দেশীয় জমিদাররা কুঠিগুলো কিনে তাদের কাচারি স্থাপন করতে থাকে। খালিশপুর কুঠি নীল চাষের শেষ দিকে পণ করা হয়েছিল। সাহেবদের কাছ থেকে কুঠিটি কিনে নেন পাবনার এক জমিদার। তিনি তার জমিদারির কাচারি স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। একজন নায়েব দেখাশোনা করতেন। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে নায়েবও এ কুঠি ছেড়ে চলে যান। ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত নীলকুঠি সরকারে খাসে নেওয়া হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায়, ১৮১১ সালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর দুতিয়ার কাঠি কুঠির মালিক মি. ব্রিজেবেন খালিশপুর কপোতাক্ষ নদীর তীরে কুঠিটি স্থাপন করেন। দক্ষিণমুখী কুঠির ভবনের দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৩০ ফুট। দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত বারান্দা।
এটি ১২টি কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন। দেওয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। নিচের তলা থেকে উপরের তলার কক্ষগুলো আয়তনে বড়। চুন, সুরকি ও পাকা ইটের তৈরি। গোসল করার জন্য পাকা সিঁড়ি কপোতাক্ষ নদীর তীর পর্যন্ত নামানো। নীলকুঠিতে রয়েছে একটি আমবাগান। নীলকুঠি ও আমবাগান মিলিয়ে সংলগ্ন এ জায়গাটি ১১.২৪০০ একর জমির ওপর অবস্থিত।