হোম > সারা দেশ > রংপুর

বিএনপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা মনোনয়নবঞ্চিতরা

রংপুর-২ ও ৩

বাদশাহ ওসমানী, রংপুর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মনোনয়নবঞ্চিতরা। ফলে উত্তেজনা বাড়ছে তৃণমূলে। রংপুরের দুটি আসনের পরিস্থিতি আরো বিব্রতকর। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) ও রংপুর-৩ (সদর) আসনে ধানের শীষের নমিনিদের বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছেন একাংশের নেতাকর্মীরা; তুলছেন নানা অভিযোগ।

আসন দুটিতে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ও তাদের সমর্থকদের অভিযোগ—কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় ফ্যাসিবাদী দলটির সুবিধাভোগী নেতাকেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি মনোনীত প্রার্থীদের ‘কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য’ আর ‘অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত কথাবার্তা’ তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিভাজন তৈরি করেছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপি । এরপর থেকেই রংপুর-২ ও ৩ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী এবং মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিরোধিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দুই পক্ষের নেতা ও তাদের সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও মশাল মিছিল করেছেন। ইতোমধ্যে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করতে দলের হাইকমান্ডকে আলটিমেটামও দিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। এ ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় এক পক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষ বড় ধরনের সংঘাতে জড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন বিরোধ ও বিভাজন তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দলের কর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবেন—এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন অনেকে।

রংপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থকদের সঙ্গে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আজিজুল হক সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

সবশেষ গত রোববার রাতে উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের ট্যাক্সের হাটে মোহাম্মদ আলীর সমর্থক শাহেদা বেগম আজিজুল ইসলামের সমর্থক আবু সাঈদ ও তার স্ত্রীকে মারপিট করেন। ‌একই রাতে রাধানগর ইউনিয়ন ও দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাটে মোহাম্মদ আলী ও আজিজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, মারামারি হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোহাম্মদ আলী, আজিজুল ও পরিতোষ চক্রবর্তীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি এবং একে অপরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ আলীকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। আসনটিতে বিএনপি মনোনীত ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতা এবং তাদের অনুসারীরা একে অপরের সমালোচনায় মত্ত। এছাড়া এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।

বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, মোহাম্মদ আলী মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলার অনেক নেতার নামে বিভিন্ন ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কথাবার্তা বলার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। মোহাম্মদ আলীর এসব শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তার প্রতিবাদে দলীয় নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে মশাল মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে হাইকমান্ডের কাছে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

আজিজুল হক আরো বলেন, ইতঃপূর্বে মোহাম্মদ আলী গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি ‘তওবা করে তার কাছে ফিরে যাওয়ার’ কথাও বলেন। তার সেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্যে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলের সুনামও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা দ্রুত তার মনোনয়ন বাতিল চেয়েছেন। তার পরিবর্তে অন্য যে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সেই প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি মাঠে কাজ করবেন বলে জানানো হয়।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান ও বদরগঞ্জ উপজেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মানিক জানান, মোহাম্মদ আলী ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির সমর্থনে তিনি দুবার উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। তাই তার ওপর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের তেমন আস্থা নেই।

তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী শাসনামলে মোহাম্মদ আলী স্থানীয় এমপি ডিউক চৌধুরী ও পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরীর সঙ্গে আঁতাত করে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সহায়তা করেন। সে সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু তার ও তার পরিবারের কোনো সদস্যের নামে একটি মামলাও হয়নি।

বিএনপির এই দুই নেতা বলেন, মোহাম্মদ আলীর কারণে বিভিন্ন মামলার শিকার বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের এখনো কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এ কারণে তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মী তার পাশে নেই। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠ ঘোলা করে বেড়াচ্ছেন।

এসব বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি তাদের বসার জন্য লিখিত চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কাছে আসেনি।

এদিকে সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য হারুন, মজিবর রহমান ও আমজাদ আলী জানান, রংপুর- ৩ আসনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান শামুকে প্রার্থী ঘোষণার পর তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ওঠে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে শামুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে রিটা রহমান তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, শামসুজ্জামান শামুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির একদল নেতাকর্মী হাইকমান্ডের কাছে শামুর মনোনয়ন বাতিল চেয়েছেন। এদিকে, দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর শ্যালক মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজুন্নবী ডন নিজের পক্ষে মনোনয়ন চেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

মাহফুজুন্নবী বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্দিনে একসঙ্গে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দীর্ঘদিন কারাবরণের পাশাপাশি অনেক অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করে মাঠে ছিলাম। নেতাকর্মীরা আমাকে চান। এ কারণে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে এখনো মাঠে কাজ করছি।

এ বিষয়ে শামসুজ্জামান শামু বলেন, দল আমাকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি মাঠে কাজ করছি। নেতাকর্মীরাও আমাদের পাশে রয়েছেন। কারা আমার বিরুদ্ধে নালিশ করছে, সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের মন জয় করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দলকে এই আসনটি উপহার দিতে চাই।

পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

আট দলের সমাবেশ থেকে ফেরার পথে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ২

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় কাউনিয়া প্রেসক্লাবে দোয়া মাহফিল

ডিলারদের কৃত্রিম সার সংকটে দিশেহারা তারাগঞ্জের আলুচাষীরা

ফারাক্কা বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরবঙ্গের ৪ কোটি মানুষ: এটিএম আজহারুল

নবাবগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিএনপি

নবাবগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জামায়াত

সাঘাটায় নতুন ইউএনও আশরাফুল কবিরের যোগদান

গঙ্গাচড়ায় আগাম আলু চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কৃষকের