শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। হিম শীতল বাতাসের সঙ্গে দেখা দিয়েছে ঘন কুয়াশার দাপট। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের জনজীবন। ভোর নামতেই জেলা সদরসহ ৫ উপজেলাজুড়ে কুয়াশার ঘনত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাস্তা, মাঠ ও বসতবাড়ি ঢেকে যায় সাদা কুয়াশার চাদরে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলা নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল ও ছিন্নমূল মানুষ। টিনের চালা ঘর, ফাঁকা দেয়াল আর কয়েক টুকরো পুরোনো কাপড়ই তাদের শীত নিবারণের একমাত্র ভরসা। গভীর রাতে ঘন কুয়াশা শিশিরের মতো নয় যেন বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে ঘরবাড়ি ও কাপড়চোপড় ভিজে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শীতের দাপট আরো বাড়তে পারে। লালমনিরহাট জেলা হিমালয়ের অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা এবং হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতাকে।
বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের ভ্যান চালক কফিল উদ্দিন জানায়, সকালে প্রচণ্ড কষ্ট হলেও জীবন জীবিকার তাগিদে ভোরেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়। আজ আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। এত বেশি ঠান্ডায় কেই ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করে না । বেশি ঠান্ডায় ভ্যানে চড়তে চায় না কেউ তবুও বের হয়েছি জীবন জীবিকার তাগিদে।
স্কুলশিক্ষক মহিউদ্দিন জানান, আর কাপানো শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। বেশি অসুবিধায় পড়েছেন ছোট বাচ্চা ও বয়বৃদ্ধরা।
আজ সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার বাহার উদ্দিন জানান, দিন দিন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডার মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাস আর কনকনে শীতে জনজীবনে অনেকটা ভোগান্তি বেড়েছে। গরীর অসহায় দিন মজুর প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেরে অনেকটা দিশেহারা হয়ে ঘরেই অবস্থান করছেন। শীতে নিবারনের জন্য মোটা গরম কাপড় পরতে হচ্ছে তবুও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছে না। বিশেষ করে ঠান্ডায় দুস্থ অসহায় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না শীত বস্ত্র না থাকায় তাদের অনেক কষ্টে কাটাতে হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তানদী তীরবতী এলাকার কৃষক আজগর আলী বলেন, আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। শীত অনেক কষ্টে আছি সকালে ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে পাচ্ছি না।
এদিকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রায় ঘরে ঘরে সর্দি, কাশি ও জ্বর হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। লালমনিরহাটে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিন এই বাড়ছে শীত জনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন শীতবস্ত্র বিতনের খবর পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।