হোম > সারা দেশ > রংপুর

ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া জামায়াত প্রার্থী নিয়ে জটিলতায় বিএনপি

আব্দুর রাজ্জাক, নীলফামারী

উত্তরের সীমান্তবর্তী জনপদ নীলফামারীতে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। জনগণের মাঝে চলছে উন্নয়ন আর প্রাপ্তির নানা হিসাব-নিকাশ। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত তাদের কর্মের ফিরিস্তি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে।

তবে ধানের শীষের নমিনি নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়েছে বিএনপি। জেলার চারটি আসনের মধ্যে এখনো দুটিতে কাউকে মনোনয়নই দেয়নি দলটি। আবার যে দুটিতে কান্ডারির নাম ঘোষণা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও চলছে আন্দোলন। অন্যদিকে আওয়ামী আমলে দখল হওয়া ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী।

জেলার চারটি সংসদীয় আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা নিয়মিত কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল, পথসভা, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে দিচ্ছেন মহড়া। এতে ভোটের মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনি উত্তাপ। দুয়েকটি আসনে শাপলা কলির নমিনি ঘোষণা করায় তাদের নিয়ে প্রচারে নেমেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য দলগুলোও মাঠে সরব আছে।

নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা)

সীমান্তবর্তী দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপি কখনো সুবিধা করতে পারেনি। সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অথবা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছিলেন। এবার তাদের অনুপস্থিতিতে আসনটি দখলে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াত। তবে এখানে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে জাতীয়তাবাদী দলটির জোট শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। এই দুই হেভিওয়েট নেতার কারণে প্রার্থী জটিলতায় পড়েছে দলটি। নেতাকর্মীদের মধ্যেও নেই তেমন কোনো উচ্ছ্বাস।

জামায়াত এখানে দলটির জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বেশ আগেই তার নাম ঘোষণা করায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে দোটানায় থাকলেও পুরো এলাকা ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন দাঁড়িপাল্লার এই নমিনি। জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনরত অন্য সাত দল সমর্থন দিলে তাকে হারানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

নীলফামারী-২ (সদর)

প্রতিবারই এ আসনে জামায়াত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য হতে হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। বর্তমানে আওয়ামী শূন্য এ ময়দানে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে জামায়াত। পুরোনো ঘাঁটি ফিরে পেতে তৎপর দলটি। প্রার্থীও দিয়েছে এলাকার পরিচিত নেতাকে। জেলা বারের সভাপতি ও জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আল ফারুক আবদুল লতিফকে দাঁড়িপাল্লার কান্ডারি করায় নেতাকর্মীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত। আওয়ামী আমলে মামলা-হামলায় ব্যাপক নিপীড়িত এই জামায়াত নেতার গ্রহণযোগ্যতাও আছে। এমনকি তিন দশক ধরে আসনটি বিএনপির এক সময়ের জোট সঙ্গী হিসেবে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ায় দাঁড়িপাল্লার ভিত্তিও অনেক শক্ত।

বিএনপি এবার প্রার্থী করেছে দলটির জেলা শাখার সদস্য সচিব এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেলকে। ফ্যাসিবাদী আমলের কারানির্যাতিত একাধিক নেতাকে ডিঙিয়ে হঠাৎ করে তাকে প্রার্থী করায় বিএনপি ভোটের ময়দানে প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীদের একাংশ। এমনকি প্রার্থী বাছাইয়ে বারবার ভুল ও যোগ্য নেতার অভাবে আসনটি হারানোর আশঙ্কাও করছেন অনেক নেতাকর্মী।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ বলছে, এ আসনে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপিকে দুই যুগ ধরে মজবুত করেছেন প্রবাসী নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি শামসুজ্জামান জামান। তাকে প্রার্থী করতে নামে বেনামে ব্যাপক প্রচারও চলছে। তার ছবিসহ পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে অসংখ্য জায়গায়।

এদিকে এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সদস্য সচিব ডা. কামরুল ইসলাম দর্পন। তিনিও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা)

একমাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে নির্বাচিত হয়ে তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে জামায়াতের এমপি ছিল। এবার দাঁড়িপাল্লার কান্ডারি করা হয়েছে জেলা জামায়াতের শূরা সদস্য ওবায়দুল্লাহ সালাফীকে। তিনি নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে দলের বাইরে থেকে মাঠ গোছাতে সব ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

বিএনপি এ আসনে এখনো কারো নাম ঘোষণা করেনি। জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করা উদ্দেশে এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে কাকে প্রার্থী করা হতে পারে তা অনুমান করতে পারছে না কেউ, কারণ একাধিক জোট শরিককে বিকল্প ধরা হচ্ছে।

তবে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দলীয় শক্ত অবস্থান তৈরি করে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলটির জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি ও দুবারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী। ইতোমধ্যে তিনি কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে দাবি করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তার আছে নিবিড় যোগাযোগ, যার কারণে তার পক্ষে প্রচারও চলছে ব্যাপক।

নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ)

দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী করেছে সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল গফুরকে। তার নাম ঘোষণার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। তার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এরপরও নিজ অনুসারীদের নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত আছেন আবদুল গফুর।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী। তারা ধানের শীষ না পেয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো অব্যাহত রেখেছেন। তাদের মধ্যে শওকত চৌধুরী বিদ্রোহ করার সম্ভাবনা আছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জনের কাছে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়ে রেখেছেন। বিএনপি আবদুল গফুরকে প্রার্থী করায় জামায়াতের সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক সাধারণ ভোটার।

এ আসনে সাংগঠনিকভাবে জামায়াত কিছুটা দুর্বল ছিল। তবে আওয়ামী অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও মাঠে টিকে থেকে ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে দলটি। আস্থা বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখানে সৈয়দপুর উপজেলা শাখার আমির হাফেজ আবদুল মোনতাকিমকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। তিনি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাতে গিয়ে দিনরাত এক করে ফেলছেন। ভোটাররাও বেশ সাড়া দিচ্ছেন বলে নেতাকর্মীদের দাবি। এমনকি অবাঙালি অধ্যুষিত আসনটির বিহারিদের অধিকাংশ ভোট দাঁড়িপাল্লায় পড়তে পারে বলে অনেকের ধারণা।

এনসিপি জুলাইযোদ্ধা আবু সাইদ লিয়নকে প্রার্থী করেছে। তিনি ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে শাপলা কলিকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম। তিনিও মাঠে তৎপর আছেন।

ওসমান হাদীকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে রংপুরে এনসিপির বিক্ষোভ

সুদানে শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত সবুজ মিয়ার বাড়িতে শোকের ছায়া

ডিবি পুলিশের অভিযানে বিদেশি মদসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

জাতিসংঘ মিশনে নিহত শান্ত ও মমিনুলের বাড়িতে শোকের ছায়া

লালমনিরহাট সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

আগাম আলু উত্তোলন শুরু, দাম নিয়ে শঙ্কা

গোবিন্দগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু

দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

তেঁতুলিয়ায় বইছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ

ওসমান হাদীকে গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল