খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শুভ বড়দিন আজ বৃহস্পতিবার। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উদযাপন করবেন।
বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গির্জাগুলো আলোকসজ্জাসহ বাহারি রঙে সাজানো হয়েছে। এ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানীর ফার্মগেট গির্জা এলাকার বাসিন্দা জেনি রোজারিও জানান, বৃহস্পতিবার মূল উৎসব হলেও বুধবার রাত থেকেই নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ফার্মগেট গির্জায় রাত ৮টা থেকে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা এ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও অন্যান্য পর্ব চলে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত। প্রার্থনা সভা শেষে ঢাকঢোল বাজিয়ে কীর্তন পরিবেশন করেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা।
তিনি আরো জানান, বড়দিন উপলক্ষে সব গির্জা এবং বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। গির্জা ও তাদের বাসায় যিশুর বিভিন্ন প্রতীকসংবলিত গোশালা তৈরি করা হয়। বড়দিন ঘিরে সবার মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ। নতুন পোশাক পরে ধর্মপ্রাণরা গির্জায় প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেক ও পিঠার আয়োজন।
বড়দিন উদযাপনকে সামনে রেখে সারা দেশে, বিশেষ করে রাজধানীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, খ্রিষ্টানদের যথাযথ ধর্মীয় উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে বড়দিন উদযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতিটি গির্জায় যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে বড়দিনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ বড়দিন উদযাপন করা হবে।
অনুষ্ঠান ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৬ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বড়দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।
বড়দিন উপলক্ষে দেশের খ্রিষ্টার ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহামতি যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। যিশুখ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত ও আলোর দিশারি। শত প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি সর্বদা শান্তি, সত্য ও ন্যায়ের বাণী প্রচার করে গেছেন, সবাইকে দিয়ে গেছেন ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা ও মহত্বের দীক্ষা। যিশুখ্রিষ্টের আদর্শ ও দীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। আজকের এই শুভদিনে বিদ্যমান এ সাম্প্রদায়িক সৌহার্দকে আরো সুদৃঢ় করে সবাইকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাই। শুভ বড়দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ, সবার জীবন ভরে উঠুক সুখ ও সমৃদ্ধিতে এ কামনা করেন তিনি।
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম-বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বড়দিন উপলক্ষে এ ধর্মাবলম্বী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যিশুখ্রিষ্ট পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায় ও মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন। মানবজাতিকে পাপমুক্ত করে সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করাই ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি। তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। দিনটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি থাকবে।