হোম > ফিচার > আমার জীবন

‘নতুন বছর হোক ঘুরে দাঁড়ানোর বছর’

নাঈমা ইসলাম

আমাদের সন্তানেরা, যারা পুরোনো ২০২৫ সালে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারেনি, তাদের মনোজগৎ আজ হয়তো কিছুটা ভারী, কিছুটা হতাশ আর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একটি খারাপ রেজাল্ট কোনো মানুষের পথের শেষ নয়; বরং নতুন পথ খুঁজে পাওয়ার শুরু। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, ব্যর্থতা কখনো স্থায়ী অবস্থা নয়; এটি উন্নতির প্রক্রিয়ার একটি ধাপ, যেখান থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা মিললে পরিবর্তন সম্ভব।

প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই বাস্তবতা স্বীকার করা যে, হতাশা, ভয়, লজ্জা—এসব অনুভূতি স্বাভাবিক। সন্তান যদি মন খারাপ করে, কাঁদে বা নিজেকে দোষী মনে করে, তাহলে তাকে বলা উচিত, ‘তুমি ভুল করতে পার, কিন্তু তুমি ঠিকই আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে।’ অনুভূতিকে দমন করা নয়, বরং বুঝে গ্রহণ করা মানসিক শক্তি গঠনের প্রথম ধাপ।

এরপর প্রয়োজন মানসিক পুনর্গঠন। অর্থাৎ নিজেকে প্রশ্ন করা—

  • কোথায় ভুল হয়েছে?
  • কোন বিষয়ে দুর্বলতা আছে?
  • কার থেকে সাহায্য নিলে উপকার হবে?

এই আত্মমূল্যায়নকে মনোবিজ্ঞানে বলা হয় reflective growth, যা ব্যর্থতাকে শেখার অভিজ্ঞতায় রূপান্তর করে।

এরপর আসে লক্ষ্য নির্ধারণ। বড় বড় পরিকল্পনা অনেক সময় চাপ তৈরি করে, কিন্তু ছোট এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ—

  • প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০-৪০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়া।
  • দুর্বল বিষয়ের জন্য সপ্তাহে অন্তত এক দিন গাইডেন্স নেওয়া।
  • প্রতি মাসে নিজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা।

এগুলোকে বলা হয় micro-goals বা ক্ষুদ্র লক্ষ্য। ছোট ছোট লক্ষ্যের ধারাবাহিক সাফল্য মানসিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং হতাশা দূর করে আত্মবিশ্বাস ও নতুন আশার সঞ্চার করে।

পরিবার ও শিক্ষকের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সন্তানেরা যেন অনুভব করে, তারা একা নয়। সমালোচনা বা তুলনা তাদের পিছিয়ে দেয়; কিন্তু সমর্থন, বোঝাপড়া, ভালোবাসা ও ধৈর্য তাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিশুকে বলা উচিত, ‘তোমার রেজাল্ট নয়, তোমার চেষ্টা এবং উন্নতিই তোমার সাফল্যের পরিচয়।’

হতাশা কমাতে কিছু কার্যকর মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল

  • প্রতিদিন পাঁচ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন।
  • তুলনা নয়, নিজের অগ্রগতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখা।
  • রাতের শেষে গ্র্যাটিটিউড লিস্ট—আজকের তিনটি ভালো ঘটনা লিখে রাখা।
  • ‘পারব না’ ভাবনার বদলে ইতিবাচক self-talk—‘আমি সময় নিয়ে শিখব, আমি পারব।’

সবশেষে মনে রাখতে হবে—রেজাল্ট নয়, নিরন্তর চেষ্টাই হলো ভবিষ্যতের সিঁড়ি। আজ যে শিশু হোঁচট খেয়েছে, কাল তাকেই জিততে দেখা যায়, যদি সে থেমে না যায়। নতুন বছরটি হোক নতুন শুরুর বছর; আত্মবিশ্বাস, শিখন, পরিশ্রম ও ধৈর্যের বছর। যাদের আজ মন খারাপ, তারা জানুক—হতাশা কোনো কিছুর শেষ নয়; এটি ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলার সুযোগ।

আমাদের সন্তানদের জন্য ২০২৬ সাল হোক—ফিরে দাঁড়ানোর বছর, পুনর্গঠনের বছর, সাফল্যের বছর।

যতক্ষণ স্বপ্ন আছে, ততক্ষণ পথ আছে।

আর যতক্ষণ চেষ্টা আছে, ততক্ষণই আশা জেগে থাকে।

লেখক : সাইকোলজিস্ট, বিআইএসসি অ্যান্ড টিসিসি

ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ দুই দফা দাবি জবি ছাত্রদলের

শুকনো নাকি ভেজা, কীভাবে উপকার চিয়া সিডের

ঘরের কাজকে সহজ করে দেবে ‘হোম রোবট’

শহীদ হাদি, আবরার ও ফেলানীর নামে হলের নামকরণ দাবি

জকসু নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের

খিলাফত রাষ্ট্রের প্রাদেশিক শাসনকর্তা

৯ দিনের শীতকালীন ছুটি পাচ্ছেন জাবি শিক্ষার্থীরা

সংবেদনশীল স্থানে ভ্রমণ

স্বপ্নগুলো ফলবতী হোক

জবি শিক্ষার্থীদের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটাব