হোম > ফিচার > তথ্য-প্রযুক্তি

ডেটিং অ্যাপে প্রতারণা

আরিফ বিন নজরুল

ডিজিটাল যুগে ভালোবাসাও এখন অনলাইনে! আধুনিক তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে নতুন সম্পর্ক গড়ছেন। ‘সোশ্যাল কানেকশন’ বা ‘রোমান্টিক ম্যাচ’ খোঁজার এই প্ল্যাটফর্মগুলো অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে একাকিত্ব দূর করার সহজ উপায়। কিন্তু এই ভার্চুয়াল ভালোবাসার আড়ালেই লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক ফাঁদÑডেটিং অ্যাপে প্রতারণা।

প্রথমে একটু পেছনে তাকাই। Tinder, Bumble, OkCupid, Coffee Meets Bagel কিংবা স্থানীয় ডেটিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করে লাখো মানুষ প্রতিদিন নতুন সম্পর্কের সন্ধান করছেন। কেউ খুঁজছেন বন্ধুত্ব, কেউ রোমান্স, কেউবা স্রেফ মনের মানুষ। কিন্তু সাইবার অপরাধীরা এই আগ্রহকেই ব্যবহার করছে তাদের প্রতারণার অস্ত্র হিসেবে।

প্রতারণার ধরন এখন নানা রকম। কেউ ভুয়া প্রোফাইল খুলে আকর্ষণীয় ছবি ও মনকাড়া কথায় বিশ্বাস জাগায়। কেউ আবার বিদেশে বসবাসের ভান করে আর্থিক সাহায্য চায়। অনেক ক্ষেত্রে কথার আদান-প্রদানে গড়ে ওঠে আবেগের সম্পর্ক। আর ঠিক তখনই শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল বা টাকা হাতানোর খেলা। কেউ কেউ গোপনে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করে পরে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করে। এমনকি কিছু প্রতারক ‘রোমান্স স্ক্যাম’র নামে অনলাইন ব্যাংক ট্রান্সফার বা গিফট কার্ডের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

বাংলাদেশেও এমন প্রতারণার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনলাইন প্রেম বা ডেটিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা ভিডিও পাঠায় আবেগে ভেসে গিয়ে। পরে বুঝতে পারেন আসলে তারা এক ভয়ংকর ফাঁদে পড়েছেন।

এই প্রতারণার পেছনে কাজ করছে উন্নত প্রযুক্তি ও মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। প্রতারকরা সাধারণত এমন মানুষদের টার্গেট করে যারা একাকিত্বে ভুগছেন বা আবেগপ্রবণ। তারা প্রথমে বিশ্বাস অর্জন করে। মিষ্টি কথায় মন জয় করে। তারপর ধীরে ধীরে চায় অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্য। একে বলে ‘Catfishing’। যেখানে একজন ভুয়া পরিচয়ে অন্যের জীবনে প্রবেশ করে তার অনুভূতি ও বিশ্বাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

এছাড়া এখন প্রতারণায় যুক্ত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিও। অনেক প্রতারক ভুয়া প্রোফাইল বানাতে ব্যবহার করছে AI-generated photos। এমন ছবি, যা আসলে বাস্তবে কোনো মানুষেরই নয়। এমনকি চ্যাটবট প্রযুক্তির সাহায্যে কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে, যা ভুক্তভোগী বুঝতেও পারেন না।

তাহলে কীভাবে এ ধরনের প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন? প্রথমত, অচেনা কারো প্রতি দ্রুত বিশ্বাস করবেন না। সম্পর্ক যতই মধুর মনে হোক, আর্থিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত ছবি পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। দ্বিতীয়ত, প্রোফাইল যাচাই করুন। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখুন ছবিটি অন্য কোথাও ব্যবহৃত হয়েছে কি না। তৃতীয়ত, ভিডিও কল বা রিয়েলটাইম যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না। চতুর্থত, যদি কোনো অ্যাপে সন্দেহজনক আচরণ দেখেন, সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করুন এবং ব্লক করে দিন। সবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—আবেগকে কখনো যুক্তির ওপর স্থান দেবেন না।

ডেটিং অ্যাপ প্রযুক্তির এক অনন্য উদ্ভাবন, যা অনেকের জীবনে সত্যিকার ভালোবাসাও এনেছে। কিন্তু প্রযুক্তির প্রতিটি সুবিধার সঙ্গে যেমন ঝুঁকি থাকে, এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যায় নিরাপদে। যদি ব্যবহারকারী সচেতন থাকেন। প্রতিটি ভালোবাসা সুন্দর, কিন্তু অন্ধ বিশ্বাসের নামে নিজের নিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ডিজিটাল যুগের ভালোবাসা হোক নিরাপদ, সত্যিকারের অনুভূতি প্রতারকের তৈরি মুখোশের নয়।

তার থেকে তরঙ্গ: যোগাযোগ প্রযুক্তির রূপান্তর

স্মার্টফোনপ্রেমীদের জন্য ‘উইন্টার ডিলস’ ক্যাম্পেইন

বন্ধ হবে অবৈধ ফোন!

কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার সামাজিক মাধ্যম

এআই যুগে এবার আইবিএম থেকে ছাঁটাই ৮ হাজার

জেমিনি এবার ব্যবহারকারীর ইমেইল ও ডকুমেন্ট পড়বে

সাইবার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু: ফয়েজ

এআই কি সত্যিই কেড়ে নিচ্ছে আমার-আপনার চাকরি

গুগল ক্রোমে এআই মোড এখন আরও সহজ

অচেনা এলাকায় ঘোরাঘুরি আরো সহজ করবে গুগল ম্যাপ