বাংলাদেশি শিশু-শিক্ষার্থী সাদ আবদুল্লাহ আয়ান জাপানের ‘সাইতামা সিটি হিউম্যান রাইটস কম্পিটিশন ২০২৫’-এ প্রথম স্থান অর্জন করে এক অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়েছে। নগরজুড়ে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে সে এ সাফল্য অর্জন করে।
জাপানের সাইতামা সিটি বোর্ড অব এডুকেশন প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যার মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবাধিকার সচেতনতা, বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সমতার গুরুত্ব তুলে ধরা। এটি বৈষম্য, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সামাজিক ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন মানবিক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করে। সাইতামার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে এ প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
আয়ান ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। আট বছরের বাংলাদেশি আয়ান বর্তমানে সে জাপানের সাইতামা শহরের ওকুবো হিগাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। জাপানি ভাষা সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান ছাড়াই সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ সালে জাপানে আসে। মাত্র দেড় বছরে সে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং এমন দক্ষতা অর্জন করে যে একটি পুরস্কারজয়ী প্রবন্ধ রচনা করতে সক্ষম হয়।
তার প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘দেশ কোনো বিষয় নয়’। কোনো ব্যক্তির জাতীয়তা তার মূল্য নির্ধারণ করে না; বরং সব মানুষ মর্যাদা ও সম্মানের দাবিদার—তার প্রবন্ধে সে বিষয়গুলো তুলে ধরে। সাইতামা সিটি বোর্ড অব এডুকেশন তার প্রবন্ধকে স্পষ্টতা, পরিণত ভাবনা ও মানবাধিকার বোধের জন্য উচ্চ প্রশংসা করে।
সাইতামার ওমিয়া শহরে অবস্থিত সাইতামা সিটি লাইফলং লার্নিং সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষা বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আয়ানের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
এই অর্জন ওকুবো হিগাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গর্বের সঞ্চার হয়েছে, কারণ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ছাত্র এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করল। জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায় আয়ানের এ অর্জনে উচ্ছ্বসিত।
আয়ানের বাবা মো. সোহেল রানা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে মেক্সট বৃত্তিতে সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত। তার মা উম্মে সালমা শীলা—উভয়েই শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তার জন্য বিদ্যালয় এবং সাইতামা সিটি এডুকেশন বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আয়ানের এ অর্জন প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি শিশুদের সম্ভাবনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ ও জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো মজবুত করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তরণের সম্ভাবনা তুলে ধরবে।