হোম > জুলাই বিপ্লব

ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, শহীদ হন পুলিশের গুলিতে

এ হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের সাগর ইসলাম নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে রক্তঝরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তবে স্বপ্নের বাংলাদেশ আর দেখা হলো না তার । পুলিশের গুলিতে ঝরে গেল প্রাণ। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া পঞ্চগড়ের পাঁচ শহীদের মধ্যে একজন ছিলেন সাগর। তার জন্ম পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের নায়েক পাড়ায়। বাবা রবিউল ইসলাম ও মা সখিনা আক্তারের ঘরে জন্ম নেওয়া সাগর শৈশবেই হারান পারিবারিক বন্ধন। বয়স যখন মাত্র ১০ মাস, তখনই মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর মা তাকে নিয়ে ফিরে আসেন একই ইউনিয়নের সর্দার পাড়ায় দিনমজুর নানা-নানির সংসারে। কিছু দিনের মধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা সখিনা। সেই থেকে সংগ্রামী জীবন শুরু হয় সাগরের।

নানা সপিজ উদ্দিন মারা যান চার বছর আগে। এরপর একমাত্র নানিকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে দিনমজুরির কাজ করতে শুরু করেন সাগর। অভাব-অনটনের মাঝেও দমে যাননি। শিক্ষা জীবনেও ছিল তার লড়াই। ২০২২ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে পাড়ি জমান ঢাকায়। মামা হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে মেরুল বাড্ডার এক ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং কাজ করতেন একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে।

ঢাকায় থেকেও দেশের রাজনীতির খোঁজ রাখতেন সাগর। স্বপ্ন দেখতেন পরিবর্তনের, বৈষম্যহীন এক সমাজের। সেই স্বপ্নই তাকে টেনে নেয় আন্দোলনের মিছিলে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে অংশ নেন তিনি। মেরুল বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন সাগর। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত মুগদা হাসপাতালে নিলে রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। রাত ১১টার দিকে সাগরের নিথর দেহ খুঁজে পান স্বজনরা। পরদিন ৬ আগস্ট লাশ নিয়ে আসা হয় চিরচেনা সেই সর্দার পাড়ায়। পরে সবার সিদ্ধান্তে সাগরকে দাফন করা হয় তার বাবার গ্রাম নায়েক পাড়ার মসজিদের পাশে।

সম্প্রতি সর্দার পাড়ায় সাগরের নানির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি ছোট ঘরটির পাশেই দাঁড়ানো নতুন একটি পাকা ঘর। সম্প্রতি ঘরটি শহীদ সাগরের মা-নানির ঠাঁইয়ের জন্য করে দিয়েছে জেলা পরিষদ। এডিপি খাত থেকে ‘গৃহ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় এই পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ঈদের পর সেই ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন সাগরের মা-নানি।

সাগরের মা বলেন, আমি ঘটনার দিন সাগরকে বলেছিলাম বাবা তুমি মিছিলে যেও না, সাগর তখন তার মাকে বলেছিল মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মারা গেলে তুমি শহীদের মা হবে। মৃত্যুর আগে মায়ের সঙ্গে এটাই ছিল সাগরের শেষ কথা। সাগরের মা বলেন, আমি অনেক কষ্টে সাগরকে গড়ে তুলেছি। যখন সাগরের বয়স ৮ মাস তখন তার বাবার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়। কখনো সন্তানের খোঁজ করেনি তিনি। এখন সাগর মারা যাওয়ার পর অনুদানের টাকার ভাগ নিতে এসেছেন তিনি ।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, পঞ্চগড়ে শহীদ সাগরসহ পাঁচজন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। প্রশাসন সবসময় এসব পরিবারের পুনর্বাসনে কাজ করছে।

জানা গেছে, সাগর শহীদ হওয়ার পর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পরিবারটি পেয়েছে ৫ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দিয়েছে এক লাখ টাকা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ পঞ্চগড়ে শীতবস্ত্র বিতরণে এসে দিয়েছেন আরো ২ লাখ টাকা।

জুলাই যোদ্ধাকে বাদী সাজিয়ে বানোয়াট মামলা

অর্থাভাবে অপারেশন করাতে পারছেন না জসিম

মাদরাসা ও সংসার হারিয়ে দিশেহারা জুলাইযোদ্ধা শফিকুর

গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছিলেন তাইম, দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিল পুলিশ

স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চান শহীদ মিজানুর রহমানের স্ত্রী

টিয়ারশেলের স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন রাফি

অবহেলার শিকার শহীদ নুরুল মোস্তফার পরিবার

আসরের আজান হলেই উত্তরায় হিংস্র হয়ে উঠত পুলিশ

পালানোর আগে দিল্লির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন হাসিনা

‘পুলিশ লোড করে দেয়, আর গুলি করে আ.লীগ সন্ত্রাসীরা’