হোম > সাহিত্য সাময়িকী > গল্প

রাফ খাতা

আবিদা সুলতানা উমামা

১.

খাতাটা টেবিলে খোলাই ছিল। বাতাসহীন ঘরে পড়ে ছিল স্থির। এই খাতা যদি জানত, আর দুদিনের মধ্যে সে সারা দেশের মানুষের নজরে নজরে ভেসে বেড়াবে, তাহলে কি সে ওভাবেই স্থির থাকতে পারত? অথবা যদি জানত, বহু চোখে ভ্রমণ শেষে একটা ল্যামিনেটেড মেশিন থেকে বের হয়ে ঘরের দেয়ালে সে ক্রেস্ট আর মেডেলের মতো শোভা পাবে, তবু মানুষ তাকে ভুলে যাবে—তাহলে কী করত? খাতাটা যখন টেবিলে খুলে রাখা হয় কলমের অসংখ্য খচখচ খচখচ আঘাতের পর, সে কি ভেবেছিল আর কিছুক্ষণ পরেই এক মা খাতাটা হাতে তুলে নিয়েও বুঝতে পারবেন না তার ছেলে এক মহান বীর হয়ে ফিরে আসবে?

২.

ধরা যাক, আমাদের এই শহীদের নাম উসমান। আমরা যারা শহীদদের কথা মনে রাখছি অথবা ভুলে যাচ্ছি, নামের অদল-বদলে আমাদের কিছু যায়-আসে না; কারণ না আমরা রক্ত দিয়েছি, না কারো রক্ত চেয়েছি। রক্ত চেয়েছে যে জালিমেরা, আমরা শুধু চেয়েছিলাম তাদের পতন। সেই পতনের দিনেও যাদের গায়ে তিনটা, পাঁচটা, ৪৭টা, ৫২টা, ৬৯টা, ৭২টা, ৭৪টা, অথবা ৯০টা গুলি লেগেছে, তাদের নাম মনে রাখার দায় আমরা এড়িয়ে গেলেও কেউ কি এসে পাকড়াও করবে? আমরা স্বৈরাচারকে নামিয়ে নিজেরা গজিয়ে নেব আট-দশটা শিং। মুক্ত-স্বাধীন দেশে ইচ্ছেমতো একে গুঁতা, ওকে ল্যাং, অথবা তাকে ধাওয়া দিয়ে বাকস্বাধীনতা উপভোগ করতে করতে ভুলে যাব শহীদজননীর কান্না।

৩.

যেহেতু আমরা সব সত্য ঘটনাই ভুলে যাই, তাই একটা কাল্পনিক প্রেক্ষাপটই ধরে নেওয়া যাক রাফ খাতাটার গল্প বলার জন্য, যে গল্পে আমরা দেখতে পাব একদিন ছেলের জন্য কেনা পাঞ্জাবির ব্যাগটা হাতে নিয়ে কীভাবে চোখ ছলছল করে ওঠে মাহবুব সাহেবের। ‘চোখের সামনে ছেলেটা কী দ্রুত বড় হয়ে গেল, বাবা-ছেলের এখন একই মাপের পাঞ্জাবি গায়ে হয়’ ভেবে কী অদ্ভুত আনন্দ-বেদনার মিশেল তাকে ঘিরে ধরে। তার মনে হয়, এই তো সেদিন কোলে নিয়ে কানে আজান দিলাম, ইকামত দিলাম। অথচ আগামীকাল সকালে সেই ছেলে ক্লাস নাইনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে। সে উপলক্ষেই যে মাহবুব সাহেব দেশের এত হট্টগোলের ভেতরেও কেনাকাটা করতে এসেছেন, তাও আমরা গল্পের খাতিরে ধরে নেব। মাহবুব সাহেবের চরিত্রটা এমনভাবে দাঁড় করাব—যে বাবা ছেলের মনস্তত্ত্ব বোঝেন বন্ধুর মতো, যিনি মনে করেন, ছেলেটা পড়াশোনায় ভালো কিন্তু মনে অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তা বেশি। তাই পড়ুয়া ছেলের মনটা হালকা করার দরকার। ধরা যাক, সকালেও ছেলেকে পড়ার টেবিলে দেখে এসেছেন তিনি। আর মনে করা যাক, মাহবুব সাহেবের স্ত্রী অচিরেই এই পড়ার টেবিলেই খাতাটা খোলা পাবেন।

বাসায় ফিরে মাহবুব সাহেব ছেলের রুমে উঁকি দিয়ে দেখেন উসমান রুমে হেঁটে হেঁটে পড়ছে। তার মানে ছেলের অস্থিরতা কমছে না।

‘দ্যাখ তো বাবা, এই প্যাকেটে কী!’ দরজাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

হাতের বইয়ের দিকে একবার দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টি ফেলে উসমান ব্যাগ হাতে নিয়ে খুলে দেখে ঘিয়ে রঙা একটা পাঞ্জাবি। এবার বই রেখে পাঞ্জাবি মেলে ধরে গায়ের সামনে। ততক্ষণে রাফিয়াও এসে হাজির। তিনি রুমে ঢুকে বাবা-ছেলে দুজনেরই চেহারার একপাশ দেখতে পান এবং এও দেখেন যে, একই রকম হাসি গালে ঝুলিয়ে তারা একে অপরকে দেখছে। তখনো তিনি জানেন না, ছেলেকে শেষবার তিনি এমন একপাশ থেকেই দেখতে পাবেন। না জেনেই তাদের নৈঃশব্দে বাগড়া দিয়ে রাফিয়া ছেলেকে প্রশ্ন করলেন, ‘কী? রিভিশন কতদূর?’

‘আর রিভিশন! এই ফালতু নতুন সিলেবাস তোমাদের পড়তে হইলে বুঝতা! এক দিনের এক্সামে তিন রকমের থিওরি মাথায় নিয়ে আমি ক্যামনে যাব, মা! বায়োলজি রিভাইজ করতে গেলে ফিজিক্সের সব ভুলে যাচ্ছি, ফিজিক্সের চ্যাপ্টার ধরলে কেমিস্ট্রির সূত্র মাথায় ঘুরতেছে। কী যে হযবরল অবস্থা!’ যেহেতু কাল্পনিক প্রেক্ষাপট তাই আমরা ধরে নিতে পারি, ফ্যাসিস্ট সরকারের আর সব কর্মকাণ্ডের মতো তাদের তৈরি এই নতুন সিলেবাসের ওপরও খুব রাগ ছিল উসমানের। কোনোদিন যদি সে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে পারত, ব্যাটাদের দেখিয়ে দিতো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ছাড়াই এমন নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্টের মজা কত!

এদিকে স্ত্রীর ওপর মেজাজ খারাপ হতে পারে মাহবুব সাহেবের। যেহেতু তিনি এসেছিলেন ছেলের অস্থিরতা কমাতে আর এই মহিলা এসে উলটা বাড়িয়ে দিল। ভ্রু কুঁচকে তাই তিনি বলেও ফেলতে পারেন, ‘কোথায় ওকে তুমি শান্ত করবা, তা না উলটা ওর টেনশন বাড়াইতেছ। এই বাবা, তুই একদম মাথা গরম করবি না তো! পারলে পারবি, না পারলে নাই। যতটুকু, মাথায় যা থাকে ওইটাই লিখে দিয়ে বের হয়ে চলে আসবি। আমাদের কোনো বিরাট ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার লাগবে না যে সব সূত্র মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে। তুই মানুষের মতো মানুষ হবি, এর চেয়ে বেশি কিছু আমরা চাই না।’ ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ বানানোর পাশাপাশি বড় মাপের ইঞ্জিনিয়ার বানানোর সুপ্ত যে আকাঙ্ক্ষা মাহবুব সাহেব মনের ভেতর লালন করেন, তা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ করলেও সেদিন সেই মুহূর্তে হয়তো করলেন না।

বাবার কথায় উসমান কতটা আশ্বস্ত হয়, তা বোঝার উপায় আমাদের নেই। তবে আমরা কল্পনা করে নিতে পারি, সে মায়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘আম্মু কোনো টেনশন দিতেছে না, আব্বু। আম্মু পড়াইতেছে বলেই তো তাও মাথায় কিছু ঢুকতেছে। নাইলে যে কী হইতো আমার!’

স্বামীর কথায় হয়তো অপরাধবোধ হলেও এবার হয়তো মন থেকে গ্লানি মুছে যায় রাফিয়ার। এক সত্যিকারের শহীদের মায়ের মতো হয়তো তার খুব ইচ্ছা ছিল উসমানকে মাদরাসায় পড়াবেন। কিন্তু বাবার ন্যাওটা ছেলেটাকে একা একা মাদরাসায় রেখে আসা যেত না বলে হয়তো বেশিদিন আর সেখানে পড়া হয়নি। রাফিয়ার পক্ষে হয়তো তখন কল্পনা করাই অসম্ভব ছিল, এই ছেলে একদিন তাদের দুজনকে ছেড়ে অনন্ত মহাকাশের যাত্রায় শামিল হতে যাবে স্বেচ্ছায়। তাই তিনি ভাবতে পারেন, বাবার ন্যাওটা ছেলেটাই এখন তার বাবার চেয়ে ভিন্ন পুরুষ হয়ে বেড়ে উঠছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কথা বলতে, কাজ করতে জানে। অবশ্য ছোট থেকেই ছেলেটা খুব লক্ষ্মী। একটা চকলেট খেতে ইচ্ছা করলেও বাবাকে প্রশ্ন করত, ‘আব্বু, তোমার কাছে কি টাকা আছে? একটা চকলেট কি কিনে দিতে পারবা?’ সেই মাসুমিয়্যাত কি রাফিয়া এখনো টের পান ছেলের আচরণে, কথায়? ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে তিনি হয়তো সে রাতে সস্নেহে উসমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আসো, সাড়ে ৮টা বেজে গেছে। খেয়ে নিই আমরা।’

৪.

খাবার টেবিলে বসে নানারকম আলাপ চলে তিনজনের। আমাদের পরিচিত এক সত্যিকারের এক শহীদের বাবা-মায়ের মতো উসমানের মা-বাবাকেও আমরা দুজন রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে ধরে নিতে পারি। ভাবতে পারি, পাতে খাবার বেড়ে দিতে দিতে তারা ছেলের মগজেও কিছু রসদ জোগান প্রতি বেলায়। দেশের অবস্থা, বিশ্বের হালচাল—সবকিছু নিয়ে হয়তো বিস্তর আলাপ হয় তাদের। কিন্তু সেদিন আপনারা কেউ সেই কাল্পনিক প্রেক্ষাপটের শহীদ উসমানদের গেন্ডারিয়ার ছোট্ট বাসাটার ডাইনিং রুমের জানালা দিয়ে তাকালে দেখতে পেতেন, উসমান কতটা অন্যমনস্ক। ওর মনের খবর না জানলে আপনারাও তার মা-বাবার মতো ধরে নিতেন পরীক্ষার ব্যস্ততায় অন্য দিকে তাকানোর ফুরসত ছেলের নেই। তাই মাহবুব সাহেব সেদিনের উত্তাল পরিস্থিতির আলাপ তুলতে গিয়েও ছেলের সামনে কিছু আর বললেন না।

কিন্তু তিনি জানতেন না, উসমানের নীরবতার কারণ আসলে তার দ্বিধা। সে বুঝতে পারছিল না কথাটা বাবা-মাকে জানানো উচিত হবে কি না। আশা করি, আপনারা ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কিছু করার মতো ছেলে সে নয়। কিন্তু আন্দোলনে যোগ দিচ্ছি শুনলে যদি আব্বু যেতে না দেয়! এই ভয় কাটানোও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সত্যিকারের সেই শহীদের মতো কোটা আন্দোলনের বিষয়ে শুরুতে উসমানও কিছু জানত না। ঢাকার রাস্তা বন্ধ কেন সে বিষয়ে আলাপ করতে করতেই বাবার কাছে জানতে পারে। বাবাই তাকে বোঝান কেন ‘রাজাকার’ সম্বোধনটা অপমানজনক হলেও এখন তা প্রতিবাদের ভাষা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলার খবর দেখার পর থেকে তার মনটা কেমন অস্থির হয়ে আছে। আজ সকালে আবার রংপুরে আবু সাঈদ নামে একজন দুহাত মেলে বুক পেতে পুলিশের গুলি বরণ করে নিয়েছে। উসমানের মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকে উত্তেজনায়। বন্ধুদের কাছে জানতে চায় কেউ আন্দোলনে যাচ্ছে কি না; কিন্তু পরীক্ষার মধ্যে কেউ ঝামেলায় পড়তে রাজি নয়। ‘একে তো নতুন সিলেবাসে কেমন প্রশ্ন আসবে তা নিয়ে যন্ত্রণার শেষ নাই, তার উপর তুই আসছোস আরেক ঝামেলা নিয়ে। আব্বা-আম্মা শুনলে ঠ্যাং ভেঙে দিবে।’

কারো কাছে সমর্থন না পেয়ে খুব হতাশ হয় উসমান। দুঃখবোধ ঘনিয়ে উঠতে থাকে বুকের ভেতর। এভাবে বসে বসে বড় ভাইদের মার খেতে দেখবে, বুক পেতে গুলি বরণ করে নিতে দেখে চুপচাপ বসে থাকবে, তা মেনে নিতে কষ্ট হয় উসমানের। আজ বিকাল ৩টার বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিল সে। কিন্তু বাসায় না জানিয়ে যাওয়া উচিত হবে না ভেবে দমে যায়। আবার আগামীকাল পরীক্ষাও। ‘কিন্তু আমার পরীক্ষা কি একেকটা জীবনের চেয়ে বেশি দামি? কাল পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলে কেমন হয়?’ নিজের সঙ্গে ক্রমাগত বোঝাপড়া চলতে থাকে তার। ভাবনার ঘোর কাটে বাবার ডাকে, ‘এই উসমান, দ্যাখ সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা দিছে, তাও অনির্দিষ্টকালের জন্য!’

উসমান লাফ দিয়ে ওঠে—‘কীইইহ!’

বাবা-মা দুজনেই চমকে ওঠেন উসমানের এমন প্রতিক্রিয়ায়। স্বামীর দিকে তাকিয়ে রাফিয়া প্রশ্ন করেন—‘আজকে প্রাইভেটের ছেলেমেয়েরা নেমে গেছে, কাল যদি স্কুল-কলেজের বাচ্চারাও রাস্তায় নেমে আসে, সেই ভয়ে না?’

‘হ্যাঁ, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলাও খালি করার নির্দেশ দিছে।’

উসমানের মুখ থেকে কথা সরে না। এতক্ষণ ও ভাবছিল স্কুল থেকে আন্দোলনে চলে যাবে, এখন তো আর সম্ভব নয়। ‘আম্মু তো আমাকে আর বের হতেই দিবে না! কী করব এখন!’

মরমে পুড়ে যেতে থাকে সে। বাবা-মায়ের কাছে বলার সাহসই করতে পারেনি। অসংখ্য আলপিনের মতো দ্বিধা আর সংকোচ এসে ফুটতে শুরু করে সারা গায়ে। এমন মলিন হয়ে উঠেছিল তার মুখটা, যা রাফিয়ার স্নেহশীল চোখে ধরা পড়তে বাধ্য হয়। পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে যদি তিনি দেখতেন সেদিন, তাহলে হয়তো প্রশ্ন করতেন না—‘বাবা, কী হইছে?’

‘এখন কি আন্দোলন থেমে যাবে, মা? সবাইকে হল থেকে বের করে দিলে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিলে কারা নামবে রাস্তায়? এতগুলো মানুষ যে মরে গেল, ওদের বিচার চাইতে হবে না? আমাকে তোমরা যাইতে দিবা? প্লিজ? আমরা এখন না গেলে রাস্তায় কারা থাকবে বল? তাহলে তো আন্দোলন থেমেই যাবে।’ একনাগাড়ে সব কথা বলে তবেই দম নেয় উসমান।

মা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না, ছেলেকে এখন কী বলা যায়। এত বড় তো মনে হয়নি নিজের পেটে ধরা সন্তানকে! ‘কী অসীম দৃঢ়তার সঙ্গে সে রাস্তায় নামতে চাইছে, কী বলিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তার কণ্ঠস্বর!’

কথা বলেছিলেন মাহবুব সাহেব—‘আব্বু, তুমি এখনো ছোট। আন্দোলন, বিক্ষোভ, মিছিল—এসব বড়দের কাজ। তোমার কিছু হলে আমাদের কী অবস্থা হবে, ভাবো একবার!’

উসমান ড্যাবড্যাব করে চেয়ে ছিল বাবার দিকে। খাতায় কলমের খচখচ আঘাতে লেখা বাক্যগুলো হয়তো তখনই বলতে চেয়েছিল—‘কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো।’

হয়তো বলেছিল, হয়তো বলতে পারেনি। অত কিছু আমরা জানি না। আমরা কেবল গল্পের খাতিরে ধরে নিচ্ছি সব। কিন্তু পরের উনিশটা দিন যে বাসায় বসে সে আহত পাখির মতো ছটফট করেছে, তা আমরা উসমানের রাফ খাতাটা খুললেই দেখতে পাব। আমরা তো জানি, আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পরদিন তার গায়েবানা জানাজা পড়তে দিল না স্বৈরাচারের অনুগত কুকুরেরা। সে রাতেই কারফিউ পড়ল, দুদিন পর ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেল একদম নিজে নিজে। খবর পাওয়া বন্ধ হয়ে গেল উসমানের। প্রতিদিন সকালের নাস্তা আনতে গিয়ে বহুবার কান পেতে শোনার চেষ্টা করেছে সে, মানুষ কী বলে। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা সে বুঝতে পারে না। আমরা জানি না কতবার তার ছুটে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে ইচ্ছা করেছিল। কতবার তার নিজেকে স্বার্থপর আর ভীতু মনে হয়েছিল—সে হিসাব—আমরা যারা বেঁচে গেছি গুলি থেকে, স্নাইপার শট থেকে, অথবা আমাদের যাদের চৌহদ্দিতেও কারো পিঠে একটা আঘাত পর্যন্ত পড়েনি, তাদের কাছে শহীদের লাশের হিসাবের মতো অগুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পতিত স্বৈরাচারের জুলুমকে দূরবর্তী ছবির মতো দেখে গেছি, আমাদের পক্ষে সর্বোচ্চ কল্পনাশক্তি খাটিয়েও ওই মায়ের মনের অবস্থা অনুমান করা সম্ভব নয়, যার ছেলের লাশ একটা স্ট্রেচারে পড়ে ছিল ঠিক সেই টেবিলের ওপর পড়ে থাকা খাতাটার মতো—স্থবির, অনড় আর…আর?

নায়িকার ছবি

অবসর জীবনে

আম্মা ও কুইন্সল্যান্ড

ভুল নামে ভোর

আয়নাঘর

হয়তো পোয়েটিক জাস্টিস, হয়তো দুর্ভাগ্য