আইআরআইয়ের জরিপ
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দেশের বেশিরভাগ মানুষের আস্থা ও সন্তুষ্টি রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সর্বশেষ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ ড. ইউনূসকে সমর্থন করেছেন, আর ৭০ শতাংশ বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া আগামীতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ৮০ শতাংশ মানুষ।
আইআরআইয়ের সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগে এই জরিপ পরিচালনা করে। ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ২০২৫’ শিরোনামে গতকাল সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, যেখানে ৪২ শতাংশ ভিন্নমত দিয়েছেন। উন্নতির কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন—অর্থনৈতিক অগ্রগতি, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা। অন্যদিকে যারা মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে, তারা প্রধান কারণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারের কাজ সমর্থন করেন বলে জানানো হয়েছে। যেখানে ২৬ শতাংশ মানুষ এটার বিরোধিতা করেছেন এবং বাকি চার শতাংশ মানুষ কোনো মতামত প্রদান করেননি। একই প্রশ্নে ৬৯ শতাংশ মানুষ ড. ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
রাজনৈতিক দলের পছন্দের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ৫১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)কে পছন্দ করে। অন্যদিকে ৫৩ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগকে যথাক্রমে ৩৮, ৩৩ ও ২৫ শতাংশ মানুষ পছন্দ করেন।
আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না জানতে চাইলে ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা অবশ্যই ভোট দেবেন। এছাড়া ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আরো ২৩ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা সম্ভবত ভোট দেবেন না।
আগামী সপ্তাহে ভোট হলে কোন দলকে ভোট দেবেন- এমন প্রশ্নে ৩০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বিএনপির কথা বলেছেন। যেখানে ২৬ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। অন্যদিকে এনসিপিকে ছয় শতাংশ, জাতীয় পার্টিকে পাঁচ শতাংশ এবং ইসলামী আন্দোলনকে চার শতাংশ মানুষ ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্য দলগুলোর ভোট রয়েছে ১১ শতাংশ। সাত শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা কাকে ভোট দেবেন এখনো নিশ্চিত নন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন ১১ শতাংশ ভোটার।
অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ ‘খুবই আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন। দেশের প্রধান সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে ২১ শতাংশ দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখিয়েছেন, আর ১৮ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ শতাংশ মানুষ আগামী বছর দেশের অর্থনীতি আরো ভালো হবে বলে মনে করেন। মাত্র ১৮ শতাংশ মনে করেন অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাবে। ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করাকে তারা সমর্থন করেন। এছাড়া দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন ভবিষ্যতের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা দেশে নতুন রাজনৈতিক দল দেখতে চান। যেখানে ৪৩ শতাংশ বর্তমান দলগুলোর ওপর সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ মানুষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে মনে করেন। ৭৪ শতাংশ মানুষ মনে করে বর্তমান সরকার সুন্দরভাবে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারবেন।