রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা লায়লা ফিরোজ ও মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে হত্যার ঘটনায় ঘাতক গৃহকর্মী আয়েশাকে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও মালামাল চুরি করে পালানোর সময় গৃহকর্মী আয়েশা আক্তারকে (২০) ধরে ফেলেন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজা (৪৮)। লায়লা ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। তখন ছুড়ি দিয়ে তাঁদের দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার দিন বাসা থেকে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় আয়েশা। ফোনটি প্রথমে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন ধরে অনুসন্ধান শুরু করে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ। পরবর্তীতে ফোনটি সাভার এলাকায় চালু হলে পুলিশ সেখানে পৌঁছে আয়েশার শাশুড়িকে পায়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আয়েশা বরিশালের নলছিটি এলাকায় অবস্থান করছে। পরবর্তীতে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বরিশালের নলছিটি এলাকা থেকে আয়েশাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি (অপারেশন) মফিজ খান বলেন, “অপরাধীরা অপরাধ করে নানা ধরনের সিম্পটম রেখে যায়। অপরাধ করে আজ পর্যন্ত কেউ ছাড় পায়নি, পাবেও না। যেকোনো অপরাধী ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে তার প্রমাণ সে নিজেই রেখে যায়। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ঘটনার দিন থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে ঘাতক গৃহকর্মীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।”
মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা বলেন, “মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম আজ সকালে বরিশাল থেকে আসামিকে গ্রেফতার করেছে।”
এর আগে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে গৃহকর্মী আয়েশা বোরকা পরে লিফটে উঠে ৭ তলায় যান। হত্যাকাণ্ডের পর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মুখে মাস্ক, কাঁধে ব্যাগ ও স্কুল ড্রেস পরে ভবন থেকে বের হয়ে যান। নিহত নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
ঘাতককে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন এসআই মাসুম, এসআই খোরশেদ, এসআই আক্কেল আলী, এসআই জসিম ও নারী কনস্টেবল শিল্পী।
পুলিশ জানায়, এ অপরাধীর সন্ধান পাওয়া ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঘটনার মাত্র দুই দিনের মধ্যে গ্রেফতার হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে এবং পুলিশ সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছে।