বাংলাদেশ ফুটবল লিগ
বাংলাদেশ ফুটবল লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর ম্যাচের আগে অনুশীলন করতে চাননি মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। এমনকি ম্যাচটি খেলতেও চাননি তারা। শেষ পর্যন্ত বকেয়া বেতনের দাবিতে ক্লাবকে আলটিমেটাম দিয়ে মাঠে নামেন ফুটবলাররা। এমন কঠিন সময়ে লিগে রোমাঞ্চকর এক জয়-ই পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। তারা ৩-২ গোলে হারাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে। চলমান লিগে এটাই তাদের প্রথম জয়ের রেকর্ড। এর আগে ফর্টিস এফসির কাছে ২-০ গোলে হেরে লিগ শুরু করে তারা। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে কোচ আলফাজ আহমেদের দল। দুই ম্যাচ পর জয়ের মুখ দেখল মোহামেডান। গতকাল অপর ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস ২-০ গোলে হারায় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ২-০ গোলে হারায় ফকিরেরপুলকে। বাংলাদেশ পুলিশ ও ফর্টিস এফসির ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে জয়োৎসবে মেতে ওঠেন মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। তাদের সঙ্গে এ আনন্দ উদযাপনে মিলেমিশে একাকার হন কোচ, কর্মকর্তা এবং দর্শকরাও। আবাহনীর বিপক্ষে শুধু একটি জয় নয়, আবেগের ম্যাচে জিতেছে তারা। তাই মোহামেডানের উদযাপনও ছিল বাধভাঙা, সীমাহীন। খেলার প্রথমার্ধে দুই গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। বিরতির পর খেলতে নেমে আরেকটি গোল করে তারা। অবশ্য দুই গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি আবাহনী।
২০ মিনিটে রহিম উদ্দিনের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। লম্বা পাসে বল সামনে বাড়িয়ে দেন মোজাফফর মোজাফফরভ। এই উজবেক মিডফিল্ডারের পাস ধরে আবাহনীর রক্ষণ ভাঙার চেষ্টায় সফল হননি স্যামুয়েল বোয়াটেং। তবে বল পেয়ে যান রহিম। আবাহনীর ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়ে সুযোগ কাজে লাগান এই ফরোয়ার্ড। এরপর ৩২ মিনিটে মোহামেডানকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন কেকে ইমানুয়েল। মোজাফফর মোজাফফরভের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল আবাহনীর জালে পাঠান ঘানার এই ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে মোহামেডান তৃতীয় গোলটি পায় ৫৮ মিনিটে। জাহিদ হাসানের ক্রস থেকে দারুণ হেডে আবাহনীর জাল কাঁপান বোয়াটেং। ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়া আবাহনী ম্যাচে ফেরার আভাস দিলেও হার এড়াতে পারেনি। ৭৩ মিনিটে আবাহনীর হয়ে পাপন সিং একটি গোল শোধ দেন। মাঝমাঠ থেকে বল টেনে বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই মিডফিল্ডার। ৭৮ মিনিটে আরেকটি গোল শোধ দেন আবাহনীর তারকা ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন। আল-আমিনের ক্রস মোহামেডানের রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফিরলে সুযোগ কাজে লাগান এই তরুণ। শেষদিকে আরো কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও গোল পায়নি আবাহনী। ফলে মোহামেডানের কাছে হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। আরেকবার আবাহনীর বিপক্ষে জয়োল্লাস করল মোহামেডান।
আবাহানীর বিপক্ষে জয়ের টার্গেটে মাঠে নেমেছিল মোহামেডান। তাদের টার্গেট পূরণ হয়েছে। ম্যাচ শেষে মোহামেডানের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠু বলেন, ‘আসলে আবাহনী-মোহামেডান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু আমরা লিগের একদম সবার শেষে, আজ আমাদের জয় পাওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিল। সে জয়টা আমরা পেয়েছি।’
৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও যেভাবে আবাহনী দুই গোল করে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয়, তাতে চিন্তায় পড়তে হয়েছিল কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে মিঠু বলেন, ‘যেহেতু আমরা তিন গোলের লিড নিয়েছিলাম, পরে দুই গোল দেয় তারা। শেষের দিকে আমরা একটু চাপ তৈরি করি। আমরা যখন কথাবার্তা বললাম যে, আমরা স্বাভাবিক থাকি, তাহলে ম্যাচটি বের করতে পারব। ইনশাল্লাহ আমরা স্বাভাবিক ছিলাম, ম্যাচটি বের করতে পেরেছি।’
ক্লাবের সঙ্গে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা নিয়ে যে সমস্যা চলছে, এ প্রসঙ্গে মিঠু বলেন, ‘ক্লাবের সঙ্গে আমাদের একটা বেতনের সমস্যা, এটা আছেই। আমরা বলেছিÑআমরা প্র্যাকটিস করব না। যেহেতু আমাদের খেলতেই হবে এবং আবাহনীর সঙ্গে খেলা, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খেলা; আমরা প্ল্যান করি ম্যাচটি আমাদের মতো করে খেলব। আমরা টাকার চিন্তা করিনি। আমরা খেলব। দেখা যাক, এখন সামনে কর্মকর্তা আছে, অফিসিয়াল আছে, ওরা আমাদের জন্য কী করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভালো খেলেছি, আমরা জিতেছি। আসলে একটা টিমের, ক্লাবের সমস্যা, টাকা-পয়সার সমস্যা, ক্লাবের মধ্যেই ছিল এটা। আমরা যখন কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেই, মূলত তখন আমরা জেতার জন্যই এসেছি। আমরা ওই টাকার জন্য আসিনি। আমরা চিন্তা করেছি, আমরা জিতব এবং তারপর অফিসিয়ালের সঙ্গে বসব, ওরা আমাদের জন্য কী করে।’