বাংলাদেশ ৪৭৬। আয়ারল্যান্ড ৫ উইকেটে ৯৮ রান।
যে উইকেটে বাংলাদেশ দুই সেঞ্চুরি ও একটি হাফসেঞ্চুরিতে ৫০০ ছুঁইছুঁই স্কোর তুলল, খানিকবাদে সেই উইকেটে আয়ারল্যান্ড ব্যাটিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল। মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ যেখানে ব্যাটিংয়ে আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পেল, সেখানে আইরিশদের এখন লড়তে হচ্ছে ম্যাচ বাঁচাতে। তাও আবার মাত্র ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই!
বাংলাদেশের এই আনন্দ এবং আয়ারল্যান্ডের সংগ্রামের মিরপুর টেস্টে এদিনও যথারীতি শিরোনাম হয়ে রইলেন মুশফিক রহিম। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের হেডলাইন হলেন মুশফিক। সেঞ্চুরি টেস্টকে রাঙালেন সেঞ্চুরির হাসিতে। আগের দিনের ৯৯ নটআউট নিয়ে খেলতে নেমে দিনের প্রথম ওভার ধীরে সুস্থে পার করলেন। কোনো রান পেলেন না সেই ওভারে। সেঞ্চুরি পুরো হতে ১ রানের তার টেনশন ছড়িয়ে গেল ড্রেসিংরুম, গ্যালারি এবং প্রেসবক্সেও! তবে সেই টেনশন দূর করতে খুব বেশি সময় নিলেন না মুশফিক। পরের ওভারেই জর্ডান নেইলের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন লিটন দাস। নেইলের দ্বিতীয় বলে কোনো রান এলো না। তৃতীয় বলটা স্কয়ারলেগের দিকে ঠেলে এক রানের জন্য দৌড়ালেন মুশফিক। রান পুরো করার আগেই দুই হাত তুলে উল্লাসে মাতলেন। সেঞ্চুরি পুরো। সম্ভবত নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিঙ্গেল রান মুশফিকের মনের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সিঙ্গেল রানই যে তাকে সেঞ্চুরি টেস্টে সেঞ্চুরিয়ানদের অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ এনে দিল।
নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে এরচেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে! এই ম্যাচে নিজের প্রথম বল থেকেই মুশফিক যে মনোযোগ এবং সতর্কতার সঙ্গে খেলছিলেন তাতে এটা স্পষ্ট ছিল সেঞ্চুরি টেস্টের আয়োজনকে ব্যাট হাতেও রাঙাতে চান তিনি। ১৯৫ বলে সেঞ্চুরি করে সেই উপলক্ষকে সত্যিকার অর্থেই রঙিন করলেন মুশফিক। টেস্টে এটি তার ১৩তম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হকের রেকর্ডে এখন মুশফিকও ভাগ বসালেন। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা নিজের তৃতীয় টেস্টে এটি মুশফিকের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
মুশফিকের সেঞ্চুরির টেস্টে সতীর্থ লিটন দাসের ব্যাটও রঙ ছড়াল। ২১৪ রানে ১০৬ রান করে মুশফিক ফিরে আসার পর মিরপুর টেস্টে লিটনের ব্যাটে রানোৎসব। লিটন দাসের সেঞ্চুরির আনন্দকে সঙ্গী করে বাংলাদেশ লাঞ্চে গেল। ১৫৮ বলে সেঞ্চুরি পান লিটন। ৫ উইকেটে ৩৮৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের এই সেশনের পুরোটাই ছিল আয়ারল্যান্ডের। ৪৭ রান করে মেহেদি হাসান মিরাজ ফিরে আসার পরই বাংলাদেশের বাকি ইনিংস হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল যেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মেহেদি হাসান মিরাজ ও লিটন দাস ১৮৯ বলে ১২৩ রান যোগ করেন। এই জুটি ভাঙতেই বাংলাদেশের শেষের ব্যাটিং হয়ে গেল ভীষণ সাধারণ মানের। মেহেদির ফেরার পর খানিকবাদেই লিটন দাসের ১২৮ রানের ঝলমল ইনিংসও শেষ। ১৯২ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় সাজানো ছিল লিটনের এই পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংস। লিটন যখন ফিরলেন দলের স্কোর তখন ৪৩৩ রান। আর দেখতে না দেখতেই বাংলাদেশ অলআউট ৪৭৬ রানে।
দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় এই সেশনে বাংলাদেশ মাত্র ৮৯ রান যোগ করে পাঁচ উইকেট হারায়। একটু জানিয়ে দিই শুরুর পাঁচ উইকেটে বাংলাদেশ তুলেছিল ৩১০ রান! বাংলাদেশের ১০ উইকেটের সবগুলোই পড়ল আয়ারল্যান্ডের স্পিনে। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১০৬ রানে ৬ উইকেট শিকার করে এই ইনিংসে দলের সেরা পারফর্মার।
চলতি সিরিজে আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা ব্যাটিং। সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টের পর মিরপুরে শেষ টেস্টেও সেই একই সংকটে পড়ল অতিথি দল। ৯৮ রানে ৫ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড আজ তৃতীয়দিন বাকি ব্যাটিংয়ে সংকটের সমাধান খুঁজে না পেলে মিরপুর টেস্ট পাঁচদিনে নাও গড়াতে পারে। আগেভাগেই বাংলাদেশ ২-০-এর আনন্দে মেতে উঠতে পারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয়দিন শেষে)
বাংলাদেশ : ৪৭৬/১০ (১৪১.১ ওভারে, সাদমান ৩৫, মাহমুদুল ৩৪, মুমিনুল ৬৩, মুশফিক ১০৬, লিটন ১২৮, মেহেদি হাসান ৪৭, ম্যাকব্রাইন ৬/১০৯)। আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৯৮/৫ (৩৮ ওভারে, বালবার্নি ২১, স্টার্লিং ২৭, হাসান মুরাদ ২/১০)।