হোম > খেলা

মুসলিম বিশ্বের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ওজিল

ক্রীড়ায় রমজান

নজরুল ইসলাম

মেসুত ওজিল

জার্মানি অভিবাসী এক তুর্কি মুসলিম পরিবারে জন্ম মেসুত ওজিলের। দারিদ্র্যের কশাঘাত উপেক্ষা করে বেড়ে উঠেছেন। জার্মানির জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে থেকেও পূর্বপুরুষের দেশ তুরস্কের রীতি-সংস্কৃতি থেকে বিচ্যুত হননি। হৃদয়ে ইসলামের রীতি-নীতি আর বিধিনিষেধের শিক্ষা ধারণ করেই হয়ে ওঠেন ফুটবল বিশ্বের সুপারস্টার। পরিবার থেকেই পেয়েছেন ধর্ম চর্চার শিক্ষা। যেটা তিনি মেনে চলছেন সব সময়। জার্মানির একটি পত্রিকাকে নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘মাঠে নামার আগে আমি কোরআন থেকে কিছু অংশ পড়ি। আমার সতীর্থরা জানে, এই সময় আমার সঙ্গে কথা বলা নিষেধ।’ কিন্তু ধর্ম চর্চার এই বিষয়গুলো শেষ পর্যন্ত অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তার বর্ণিল ফুটবল ক্যারিয়ারের পথে। ফুটবলে ওজিলের অসাধারণ সব অর্জন এসেছে মাঠে নামার আগে পবিত্র আল-কোরআন ও নামাজ পড়ে নেওয়ার সুবাদে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ওজিলের সুসম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি জার্মানি। জার্মানি-তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রভাবটা পড়েছিল দুজনের সম্পর্কে। দুজনের বন্ধুত্ব পছন্দ হয়নি জার্মানির অনেক রাজনীতিবিদের। ২০১৮ বৈশ্বিক আসরে জার্মান সতীর্থরা তাকে পাস দেননি। ওজিল পাস দিলেও সতীর্থরা গোল দেননি। মুসলিম বলেই এমন বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানি ছিটকে যাওয়ার পর ব্যাপারটা রূপ নেয় নোংরামির পর্যায়ে। এর মূল কারণ ওজিল মুসলিম আর তার শেকড় তুরস্কে থাকায়। হিংসাত্মক আচরণের প্রতিবাদে জার্মানির জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেননি ওজিল। জার্মানি ত্যাগেরও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

মাঠের লড়াইয়ের মেগাস্টার ওজিল ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মুসলিম বিশ্বের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। নিজের প্রতিবাদী চরিত্রের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। টুইটার পোস্টে উইঘুর সম্প্রদায়কে ‘অত্যাচার প্রতিহতকারী যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করে লেখেন, ‘এই গৌরবময় বিশ্বাসীরা একসঙ্গে লড়াই করে তাদের বিরুদ্ধে- যারা মানুষকে জোরপূর্বক ইসলাম থেকে সরিয়ে দিতে চায়।’

পোস্টে আরো লিখেছিলেন, ‘সেখানে কোরআন পোড়ানো হচ্ছে, মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, ইসলামিক স্কুল, মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, ধর্মীয় নেতাদের একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও সারা বিশ্বের মুসলিমরা নীরব রয়েছে।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরাইলির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন ওজিল।


ওজিলের ওই টুইটের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানায় চীনা সরকার। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-আর্সেনাল ম্যাচের সম্প্রচার বাতিলও করে তারা। ওজিলের সাবেক ক্লাব আর্সেনালের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় এতে। এমিরেটস শিবিরে ব্রাত্য হয়ে পড়া ওজিল শেষে ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন। সে সময় ওজিলকে সতর্ক করেছিলেন তার কাছের লোকজন, এজেন্ট, আর বন্ধুরা। চীনে ফুটবল দুনিয়ার বিশাল এক বাজার। চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম উইবোতে ওজিলের ফলোয়ার ছিল ৬০ লাখের বেশি। এশিয়ার দেশটিতে ছিল ওজিলের ফ্যান ক্লাবও। ওই টুইটের পর এসবই হারান ওজিল। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াননি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তবে এ নিয়ে কখনো বিন্দুমাত্র আক্ষেপ করতে দেখা যায়নি ওজিলকে।

রোজা আর ফুটবল খেলা- মানে ধর্ম ও দায়িত্ব দুটোই একসঙ্গে সেরে নিতেন ওজিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে রোজা রেখেই অনুশীলন করেছেন। সঙ্গে খেলেছেন ম্যাচও। কিন্তু তারপরও তার দাপুটে পারফরম্যান্সে কোনো ধরনের ভাটা পড়েনি। জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো ওজিলের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে ছিলেন, রোজা রাখবে না খেলবে? উত্তরে ‘জার্মানির জিদান’-এর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘খেলা নয়, রোজা আমার জন্য ফরজ। আমি রোজা রেখেই খেলা চালিয়ে যাব। আমার কাছে আগে রোজা, পরে খেলা।’

ওজিল প্রমাণ করে দেন ইসলাম বিশ্বের সেরা ধর্ম। আর্সেনালের হয়ে কর্নার কিক নেওয়ার সময়, গ্যালারির এক দর্শক এক টুকরো রুটি ছুড়ে মেরেছিল তার দিকে। সেই রুটির টুকরো পা দিয়ে সরাননি। সবাইকে অবাক করে রুটির টুকরোটি হাতে নিয়ে চুমু খান, কপালে ছোঁয়ান। পরে ওজিল রুটিটুকুকে এক পাশে সরিয়ে রাখেন। দেখিয়ে দেন ইসলাম খাবারকে সম্মান করতে শেখায়। ‘তোমরা অপচয় করো না’ কোরআনে আল্লাহতায়ালার এ বাণী ওজিল ভুলে যাননি।

মক্কার কাবা শরিফের মহামূল্যবান গিলাফের এক টুকরো উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন ওজিল। ইনস্টাগ্রামে তার ছবি পোস্ট করে ওজিল ছবির ক্যাপশনে লেখেছিলেন, ‘মক্কার কাবা শরিফের গিলাফের বিশেষ এক খণ্ড আমার লন্ডনের বাসায় উপহার হিসেবে পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’


মুসলিমদের হয়ে শুধু কথাই বলেননি ওজিল। ইসলামি আইন মেনে দান করায় তার হাতও ছিল অনেক বড়। বিশাল হৃদয়ের অধিকারী সাবেক এ জার্মান খেলোয়াড় চালিয়ে যান মানবতার কাজ। পবিত্র মাস রমজানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহায়তার জন্য তুরস্কের রেড ক্রিসেন্টকে অনুদান দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে- যা পেয়েছে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শিশু এবং তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিরিয়া ও সোমালিয়ার শিশুরা। ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতা ওজিল বিশ্ব আসর থেকে আয় করে ছিলেন সাড়ে ৪ লাখ ইউরো। এই আয়ের পুরোটা ইসরাইলি হামলায় গাজার ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সহায়তায় দান করেন ধর্মপ্রাণ এ মুসলিম ফুটবলার। ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ায় ফিফা কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত পর্যন্ত মেলাননি এ মুসলিম ফুটবল স্টার। ইসলামের প্রতি এমন অনুরাগই মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ওজিল। এ জন্যই তো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভক্ত-সমর্থকরা তার ছবিতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখেন ‘ওজিল দ্য প্রাইড অব মুসলিম’।

ওয়ানডেতে জয়ে শুরু পাকিস্তানের

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের নেতৃত্বে আকবর

উৎসবের সঙ্গে নির্বাচনও

ভারতকে হারানোর অভিন্ন লক্ষ্য কাবরেরার

এনসিএলে ড্রয়ের দিনে মুশফিকের সেঞ্চুরি

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে বিরাগভাজন মাদকাসক্ত শন উইলিয়ামস

আবারো নিজেকে সেরা দাবি রোনালদোর

একাদশে নেই মেসি-রোনালদো, ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ইয়ামাল

আয়ারল্যান্ড সিরিজের টেস্ট দলে নেই কোনো চমক

ব্রাজিল দলে এবারও জায়গা হলো না নেইমারের