অবশেষে যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। তুরস্কে পাঁচ দিন ধরে চলা আলোচনার পর অন্তত এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো দেশ দুটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মধ্যস্থতাকারী তুরস্ক ও কাতার এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিভিন্ন শর্ত নিয়ে আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তানবুলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা পুনরায় বৈঠকে বসবেন।
সেই বৈঠকের আগ পর্যন্ত যাতে কোনো সংঘাত না হয়, সে ব্যাপারে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরকার সজাগ থাকবে বলেও দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, আশা করছি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর ঘটবে না। আফগানিস্তানের ভূখণ্ড পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে তালেবান সরকারকে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের এখন আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য একটি নতুন ফোরাম থাকবে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত পুনরায় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে নেয়া হবে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বলেছেন, তালেবান সরকারের ভারতের প্রক্সি হওয়া উচিত নয়। ভারত আফগানিস্তানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের জোটবদ্ধতা কাবুলের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান তার নীতিগত অবস্থানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতিকে পাকিস্তানের নীতিগত অবস্থানের বিজয় বলে ঘোষণা করেন তিনি।
আফগান তালেবান প্রতিনিধিদলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ বিষয় শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের কিছু দাবির জন্য আরো সময় প্রয়োজন। কারণ সেগুলোতে একমত হওয়া কঠিন ছিল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, আলোচনা এখনও কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি এবং কাতার ও তুরস্কের নির্দেশনায় কাবুলের অবস্থান পরিবর্তনের ওপর অগ্রগতি নির্ভর করবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ডুরান্ড লাইন নামে পরিচিত ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে তা তলানিতে ঠেকেছে। এর প্রধান কারণ হলো পাকিস্তানের তালেবানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান বা (টিটিপি)।
পাকিস্তান সরকার গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এটি ভালোভাবেই টিকে আছে এবং তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির ঘাঁটি এলাকা এবং এই প্রদেশটির সঙ্গেই আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে, টিটিপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগান তালেবানরা। যদিও আফগানিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। জবাবে গত ১১ অক্টোবর সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাচৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। পরে পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করে পাকিস্তান।
১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংঘাতের পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে পাকিস্তান-আফগানিস্তান। যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত এই সংঘাতে ২ শতাধিক আফগান সেনা এবং ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। সূত্র : জিও নিউজ