ঢাকা-আরিচা ও পাটুরিয়া মহাসড়ক এখন নিত্য দুর্ঘটনার সড়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত চার মাসে এই সড়কে দুর্ঘটনার কারণে হাইওয়ে পুলিশ প্রসিকিউশন মামলা করেছে সর্বমোট এক হাজার ১০০টি এবং জরিমানা আদায় করেছে ৪২ লক্ষাধিক টাকা। একই সঙ্গে নিয়মিত মামলা করেছে ১৩টি।
মাত্র ৭৫ কিলোমিটারের রাস্তায় রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন পাঁচ শতাধিক বাস চলাচলই দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাছাড়া রাস্তায় যাত্রী ধরতে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভাররা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় এবং দ্রুত ওভারটেকিং করতে গিয়েই দুর্ঘটনায় পড়ে।
জানা গেছে, মহাসড়কের আরিচা-পাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ এলাকার মধ্যেই গত চার মাসে বিভিন্ন বাস দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। যাতে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৯ জনের এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। জেলার গোলড়া, মুলজান মোড়, তরা, ফলসাটিয়া, গিলন্ড, পুখুরিয়া, টেপড়া, উথলী মোড়, পাটুরিয়া মোড় ও পাটুরিয়া আরসিএল মোড়সহ বেশ কিছু স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি পাটুরিয়ার আরসিএল মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় উদীয়মান ছাত্র রিয়াদ। বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিল সে।
এই রুটে চলাচলরত সেলফি, নীলাচল, যাত্রীসেবা, সেবালিং, শেফালী, পদ্মা লাইন, প্লাস, স্বপ্নসহ বিভিন্ন লোকাল বাসের মধ্যে সেলফি বাসের দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি বলে জানা যায়। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার, প্রতিযোগিতা করে এলোমেলো গাড়ি রাখা, সময় স্বল্পতার কারণে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং চলন্ত অবস্থায় খাবার খাওয়াই দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে পরিবহন সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন।
এ বিষয়ে বিআরটিএর ঢাকা জেলার সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাটুরিয়া হতে ঢাকা চলাচলের জন্য মাত্র ৬৪ সেলফি গাড়ির রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। নীলাচল পরিবহনের কোনো রুট পারমিট নেই। এসব পরিবহনসহ অন্যান্য রুট পারমিটবিহীন গাড়ি কীভাবে চলে সেটা দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থার জন্য গাড়ির ফিটনেসসহ সব কাগজপত্র থাকা এবং দক্ষ ও লাইসেন্সধারী ড্রাইভার অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে সেলফি পরিবহনের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের সব গাড়িরই রুট পারমিট আছে। রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চলে না। অনেকের ফরিদপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জায়গার নামে রুট পারমিট নেওয়া আছে। কিন্তু বেশিরভাগই গাবতলী হতে পাটুরিয়া পর্যন্ত চলাচল করে।
এসব ব্যাপারে বরংগাইল হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং গোলড়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেছেন, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চললে আমরা আইনগতভাবে তাদের নামে মামলা এবং জরিমানা করে থাকি। তাছাড়াও সব যানবাহনের কাগজপত্র আপডেট করার জন্য নিয়মিত তদারকি করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশের এসপি ডক্টর আকতার উজ্জামান বসনিয়া এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, মহাসড়কে কোনো ধরনের অবৈধ গাড়ি যাতে চলতে না পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।