হোম > সারা দেশ > ঢাকা

ঘোড়াশাল সার কারখানার একাধিক ভবনে ফাটল

নরসিংদীতে ভূমিকম্প

শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা। ফাইল ছবি

নরসিংদীতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর থেকে একের পর এক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য মিলছে। এবার ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার একাধিক ভবনে ফাটল শনাক্ত হয়েছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ভবনগুলো নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। চরম দুশ্চিন্তায় রাত্রিযাপন করছেন সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোয় বসবাসকারীরা।

প্রতিষ্ঠানটি আগে ঘোড়াশাল ও পলাশ সারখানা নামে দুটি কোম্পানিতে বিভক্ত ছিল। সেগুলো ভেঙে একত্রিত করা হয়েছে। নবনির্মিত এই কারখানার আবাসিক ভবনগুলোও নতুন রূপে তৈরি করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তমা কনস্ট্রাকশন এবং মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোম্পানিকে তিনটি প্যাকেজে ৬৬টি ভবন নির্মাণের জন্য নিয়োগ করে কর্তৃপক্ষ।

প্রথম প্যাকেজে তমা কনস্ট্রাকশন চারটি ভবন, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজের জন্য ১২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। গত বছরের মেতে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে একই বছরের জুনে ১২৩ কোটি টাকার বিনিময়ে কারখানার ৩১টি ভবন নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয় মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোম্পানি। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরো ৩১টি ভবন নির্মাণের জন্য ১২৩ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় একই প্রতিষ্ঠান।

প্যাকেজের চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে আবাসিক এলাকাসহ অন্যান্য কাজ শেষ করার কথা আছে। এরই মধ্যে তিন প্যাকেজের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের সিভিল কনস্ট্রাকশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এবং উপ-ব্যবস্থাপক কেএম আশরাফুল আলম।

গত ২১ ও ২২ নভেম্বর শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোম্পানির নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি ভবনে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে চরম উদ্বেগের মধ্যে আছেন কারখানায় বসবাসকারী শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা নির্মাণ কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

কারখানার এক নম্বর প্রধান গেট থেকে ভেতরের দিকে নদীর পাড় যাওয়ার প্রধান সড়কের বাম দিকের দ্বিতীয় সারির ডান দিকের চারতলা নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ির পাশে দুটি বিশাল আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। সামান্য ভূমিকম্প অথবা ঝড়েই ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা। এছাড়া পুরাতন ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের বসবাসকারী ভবন এবং তাদের পাশের আরো দুটি ভবনের দেয়াল ও সিঁড়িতে বিশালাকার ফাটল তৈরি হয়েছে। এ কারণে ভবনগুলো ছেড়ে দিয়েছেন বসবাসকারীরা। কারখানার অভ্যন্তরে ১-১২-২০৩ নম্বর সেকেন্ডারি রিফর্মারে মারাত্মকভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কারখানার ভেতরে ঝুঁকি বাড়ছে।

কারখানার আবাসিক ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক কামাল হোসেন মোবাইল ফোনে আমার দেশকে বলেন, এবারে যে মাত্রায় ভূমিকম্প হয়েছে এতে শুধু এই কারখানার ভবন নয়, মেট্রোরেলের মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ দেশের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের তুলনায় এটা তেমন কিছু না। এটি আমরা পরদিন প্লাস্টারের মাধ্যমে সমাধান করে দিয়েছি।

কারখানার এই ক্ষতিগ্রস্ত নির্মাণাধীন আবাসিক ভবনগুলো ফাটলের কারণে ঝুঁকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে লাইনটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সিভিল কনস্ট্রাকশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান ও উপ-ব্যবস্থাপক আশরাফুল বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে ভূমিকম্পের কারণে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তা ভবনের তেমন ক্ষতি করবে না। কেননা ফাটলগুলো বিমে ধরেনি, তাই এই ফাটল সংস্কার অথবা পুনঃনির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই কাজ তদারকিতে ওশো ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়নের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারা এই ফাটলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দিলে লিখিতভাবে চূড়ান্ত নোটিস দেওয়া হবে।

কারখানার আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী স্কুল শিক্ষক মিনতি রানী দাস বলেন, ১৯৭০ সালের দিকে কারখানার প্রতিষ্ঠাকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আবাসিক এলাকার অধিকাংশ ভবনে পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু রয়ে গেছে ১৯টি ভবন। সাম্প্রতিককালের ভূমিকম্পে অধিকাংশ ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে, যার কারণে এতে বসবাসকারী মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। নিরাপত্তা কর্মীদের ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তারা প্রশাসনের কাছে বাসস্থান পরিবর্তনের দাবি জানালে কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তাদের সরিয়ে নেয়।

সাবেক সিবিএ নেতা প্রদীপ কুমার দাস বলেন, অর্ধ শতাব্দীর অধিক সময় ধরে পুরাতন আবাসিক ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। ভূমিকম্পের মাত্রা আরেকটু বেশি হলে অধিকাংশ ভবন মাটিতে লুটিয়ে পড়ত, মারাত্মক ক্ষতি হতো সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীর। আমার অনুরোধ প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক। পাশাপাশি নির্মাণাধীন ভবনগুলো যেন মানসম্মত হয় এ বিষয়ে প্রশাসন যেন নজর দেয়।

এদিকে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিমুক্ত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য কারখানার অতিরিক্ত রসায়নবিদ সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ তারেকের নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতে পারে।

পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাব স্টেশন এবং আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ঘোড়াশাল রেল সেতুতে দুটি পিলারে ফাটল দেখা গেছে। ঘোড়াশাল সার কারখানার নির্মাণাধীন ও পুরাতন আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের ভবন এবং সামনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জরুরি সভা করে আতঙ্কিত মানুষকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করার জন্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ভূমিকম্পে পলাশের নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের কাছে জেলা প্রশাসনের দেওয়া অনুদানের অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে।

ঘুষ নেয়ার অভিযোগে পুলিশের উপর হামলা

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ধামরাইয়ে দোয়া মাহফিল

গোপালগঞ্জে ৭ ইউপি মেম্বারের আ. লীগের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা

গাজীপুরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

আ. লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদান

আর কোন ফ্যাসিবাদের স্থান হবে না: মামুনুল হক

মাটিকাটা বিরোধের জেরে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে জখম

দেশে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেব না: মামুনুল হক

সালথায় বিরল প্রজাতির মেছো বিড়ালের তিন বাচ্চা উদ্ধার

সিংগাইরে রাতের আঁধারে রাস্তায় মিলল লাশ