নড়াইলে নবগঙ্গা নদী থেকে অবৈধ ঘূর্ণায়মান কাটার হেড বা সাকশন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাছলা ইউনিয়নের ভাঙন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। এখানকার পাটকেলবাড়ি, হাছলা ও শুক্ত-গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে চলেছে। অব্যাহত ভাঙনে দীর্ঘ হচ্ছে বাস্তুহারা মানুষের সারি।
সরেজমিন দেখা-গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালালেও তা বিশেষ কাজে আসছে না, আগ্রাসী ভাঙন সবকিছু গ্রাস করছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে মহাজন-বারইপাড়া পাঁকাসড়ক (বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ), শুক্তগ্রাম বাজার, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বাড়ি-ঘর স্থাপনা। ভাঙন প্রবণ এলাকা সংলগ্ন বৃহচলা মৌজায় সরকার ঘোষিত সাড়ে ৮একর বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী সাকশন ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে বেসুমার বালু উত্তোলন করে ট্রলার বোঝাই চলছে।
স্থানীয়রা বলছে, বৃহচলা বালুমহল এখানকার নদীতীরবর্তী মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে আর্বিভ’ত হয়েছে। সরকার বৃহচলা মৌজাধীন সাড়ে ৮ একর বালু মহল ইজারা দিলেও ইজারা বর্হিভ’ত এলাকা থেকেও রাতে দিনে বালু তোলা হচ্ছে, মোটা বালুর লোভে গভীর রাতে তীরের কাছাকাছিও দৈত্যকায় ড্রেজার ভিড়িয়ে বালু কাটা চলছে। নদী জুড়ে একযোগে ৮/১০টা পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে রাশিরাশি বালু তোলায় নদীতে ¯স্রোতের তোড় না থাকলেও নদী তীর বিপদজনক ভাবে দেবে যাচ্ছে। এ ভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে এখানকার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। বসতি, রাস্তাঘাট, ফসলীজমি ক্রমে নদী গ্রাস করছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয় মহাজন-বারইপাড়া পাঁকা সড়কে রূপান্তরিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, শুক্তগ্রাম বাজার, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বাড়িঘর স্থাপনা; এর ফলে এলাকাবাসী চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়াইল রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজীৎ কুমার সাহা বলেন, নবগঙ্গা তীরবর্তী পাটকেলবাড়ি, হাছলাও শুক্তগ্রাম আগে থেকেই ভাঙন প্রবণ, এখানকার বৃহচলা মৌজায় নবগঙ্গা নদীতে সরকার ঘোষিত বালুমহাল থেকে অবৈধ সাকসন ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পীতভাবে বিপুল পরিমাণে বালু উত্তোলনের ফলে সংলগ্ন এলাকার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখানকার নদীতীরবর্তী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এ বাঁধ ভেঙে গেলে বিল সেঞ্চুরি প্রকল্পসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি মাছের ঘের জলমগ্ন হয়ে কয়েক শো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত বালু মহলের ইজারা বাতিল করে বালু তোলা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।
অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, বালুমহাল ইজারা দেয়া হলেও অবৈধ সাকশন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন গ্রহণযোগ্য নয়, প্রচলিত পদ্ধতি ব্যথিত যে কোন অবৈধ কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গলে জনস্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।