নীলফামারীতে সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ৩ সপ্তাহ ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ৩টি পরিবার।
এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে ১১ অক্টোবর জেলা সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নের বাবরীঝাড় এলাকায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ সঠিকভাবে পালন না করায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এ অবস্থায় দাঁড়িয়েছেন তারা।
জানা যায়, অন্য ডিক্রিজারি-০৫/২৪ মোকদ্দমার তফশীল বর্ণিত এস.এ খতিয়ান নম্বর ২১, বি.এস খতিয়ান নম্বর ১৫৯, সাবেক দাগ নম্বর ৯১ এবং বি.এস দাগ নম্বর ১৪৪ সম্পত্তিতে ৬৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৪ শতাংশ দাগের পূর্বদিকে বিবাদী পক্ষের টিনের চালাঘর অপসারণসহ খোলাসা দখলের নির্দেশ দেন আদালত। এরই প্রেক্ষিতে ডিক্রিদার পক্ষে সিভিল কোর্ট কমিশনার অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম শাহের উপস্থিতিতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত নাজির মেহেদী পারভেজকে দখল প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের নির্দেশে ওই উচ্ছেদ অভিযানে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নালিশী জমির পাশাপাশি নালিশীর বাইরের ভূমির গাছপালাসহ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাবুল হোসেন জানান, বাদী পক্ষ লুৎফর রহমান গং নীলফামারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অন্য ১৬/১৫ নম্বর মামলা করেন। উক্ত মামলায় নালিশী জমি ছিল চার শতাংশ এবং বাদী পক্ষের মোকদ্দমায় বিবাদীর তিনটি টিনের চালাঘর উচ্ছেদের নিমিত্তেই এই মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত বাদীপক্ষকে চার শতাংশের মধ্যে টিনের চালাঘর অপসারণের রায় ডিক্রি প্রদান করেন। এতে বিবাদীপক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়ে জেলা জজ আদালতে অন্য আপীল ৯৫/২৪ দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত-১ এ বিচারাধীন রয়েছে।
বাদীপক্ষ অন্য ডিং ১৬/১৫ নম্বর মামলার রায় ডিক্রি প্রাপ্ত হয়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অন্য ডিং-০৫/২৪ মামলা করেন। যা বিবাদীপক্ষ অবগত ছিল না এবং অন্য ডিং-০৫/২৪ মামলা পরিচালনা সংক্রান্তে বিবাদী পক্ষ আদালত থেকে কোনো প্রকার নোটিশ প্রাপ্ত হননি। বিবাদী পক্ষ অন্য ডিং-০৫/২৪ মামলার দখলি পরোয়ানার বিষয়বস্তু জানতে পেরে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের নিমিত্তে অন্য ৯৫/২৪ নম্বর মামলায় দরখাস্ত আনয়ন করলে, আদালত ২৩ সেপ্টেম্বর/২৫ শুনানির জন্য ধার্য করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ স্থগিতের দরখাস্তের বিষয় জানতে পেরে নালিশী ভূমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ সেপ্টম্বর/২৫ আদালত হতে দেনদার পক্ষের নালিশীয় চার শতাংশ জমির উপর চারটি টিনের চালাঘর উচ্ছেদের নির্দেশ থাকলেও, নালিশীয় চার শতাংশের অভ্যন্তরে ওই ৩টি টিনের চালাঘরসহ আরও বেনালিশীয় আটটি টিনের চালাঘর ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং নালিশের বাইরের ভূমির গাছপালাও কেটে ফেলা হয়। এতে বিবাদীপক্ষের প্রায় ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। আদালতের নির্দেশে ডিক্রিদার পক্ষে চার শতাংশ জমির উপর স্থাপনা উচ্ছেদের সময় জমি পরিমাপ করে বাদীপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু বলাই বাহুল্য, যারা অপসারণের দায়িত্বে ছিল আদালতের আদেশ আইনানুগভাবে পালন না করায় চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিবাদীপক্ষ। তারা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদালতের আদেশ ভুলভাবে বাস্তবায়নে সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও, আদালতের প্রতি ন্যায় বিচারে যথেষ্ট আশাবাদী তারা।