এ পৃথিবীতে রয়েছে হাজার হাজার পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ। তবে আমরা যতটুকু জানি, তার চেয়েও অনেক বেশি কীটপতঙ্গের বিচরণ রয়েছে আমাদের দৃষ্টির বাইরে, যা খালি চোখে দেখতে পাই না। এর কিছু আছে প্রকাশ্যে, কিছু গাছগাছালির ছালবাকলের আবরণে, পরিত্যক্ত জীর্ণ স্থানে এবং মাটির তলে। যেগুলো দৃষ্টির বাইরে, সেগুলো বাদ দিলেও যেগুলোর প্রকাশ্যে বিচরণ, সেগুলোর মাঝেও রয়েছে অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত প্রাণী, যাদের নামই আমাদের জানা নেই। সে রকম অদ্ভুত একটি প্রাণী পান্ডা অ্যান্ট (Panda Ant)।
নামকরণ : পান্ডা এক প্রজাতির প্রাণী। অদ্ভুত এই পিঁপড়ার শরীরে পান্ডাদের মতো সাদা-কালো রঙের ছোপ আছে। তাই এদের পান্ডা পিঁপড়া বলা হয়। এদের আরেক নাম ‘কাউকিলার’, কারণ এরা এদের মারাত্মক বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে গরু কিংবা তার চেয়ে বড় প্রাণীর অবস্থা নাজেহাল করে দিতে পারে। তবে এরা আক্রমণাত্মক স্বভাবের নয়।
আকৃতি : আকৃতিতে পান্ডা পিঁপড়ারা সর্বোচ্চ আট মিলিমিটারের মতো হয়। ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে প্রথম পান্ডা পিঁপড়ার খোঁজ পাওয়া যায়। পরে গবেষণা করে জানা যায়, বালু ও ছোট নুড়িপাথুরে এলাকায়ও এদের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু এদের পিঁপড়া বলা হলেও এরা পিঁপড়া নয়। এরা মূলত বোলতা বা ভিমরুল গোত্রের প্রাণী। শরীরে আছে পান্ডার মতো সাদা-কালো মিশ্রণ, সাদা মাথার মাঝে কালো রঙের ছোট্ট চোখ দুটো বেশ চমৎকার। দেহের মাঝে কালো রঙের ওপর সাদা ছোপ ছোপ, আর পেছনে রয়েছে সাদার ওপর কালো রঙের দাগ।
পুরুষ ও স্ত্রী পান্ডা অ্যান্টের বেশ পার্থক্য রয়েছে। পুরুষরা আকারে বড় হয়। তবে স্ত্রী পান্ডা পিঁপড়ারা বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে থাকে। সাদা-কালো রঙ শুধু স্ত্রী প্রজাতির মধ্যেই দেখা যায়। পুরুষ পান্ডা পিঁপড়ার পাখা থাকলেও স্ত্রী পান্ডা পিঁপড়ার পাখা নেই। পাখার বদলে তাদের রয়েছে লোমশ এবং ভয়ংকর এক হুল, যা ফোটালে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের দৈর্ঘ্য প্রায় এক থেকে দুই সেন্টিমিটার। তবে স্ত্রী পান্ডা পিঁপড়ার হুলসহ দৈর্ঘ্য মাত্র আট মিলিমিটার হয়ে থাকে। পান্ডা অ্যান্টরা বাঁচে দুই বছর।
বাসস্থান : পান্ডা পিঁপড়া মূলত চিলি ও আর্জেন্টিনার দেশগুলোর শুষ্ক অঞ্চলে বেড়ে ওঠে। চিলি ছাড়াও আমেরিকা ও মেক্সিকোর কিছু মরু অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের শুকনো মরুভূমি বা বালুকাময় পরিবেশ তাদের বাসস্থানের উপযুক্ত। তবে এরা মাটির গর্তে থাকতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
খাবার : পান্ডা পিঁপড়া বিভিন্ন ফুলের মধু খায়। প্রাপ্তবয়স্ক পান্ডা পিঁপড়ারা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে। এদের প্রিয় খাবার ফুলের মধু। এছাড়া পান্ডা পিঁপড়া পোকামাকড়ের লার্ভা খেয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য ও প্রজনন : পুরুষ পান্ডা পিঁপড়া দিনের বেলা চলাফেরা করলেও স্ত্রী পিঁপড়া রাতে হাঁটাচলা করে ।
পুরুষ পান্ডা পিঁপড়ার পাখা থাকলেও হুল নেই । হুল রয়েছে স্ত্রী পান্ডা পিঁপড়ার। ওই ভয়ংকর হুলই পরে ডিম পাড়ার অঙ্গে পরিণত হয়। এরা অন্য পিঁপড়াদের মতো দল বেঁধে চলে না, বরং বোলতাদের মতো একা একা থাকতে পছন্দ করে। তবে শুধু প্রজনন মৌসুমে সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। স্ত্রী পিঁপড়া প্রতিবারই দু’হাজার ডিম পাড়ে। তবে মজার কথা হলো, স্ত্রী পিঁপড়ার যখন ডিম পাড়ার সময় হয়, তখন ভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়া বা কীট-পোকার বাসায় ডিম পাড়ে, যাতে সদ্য জন্ম নেওয়া পান্ডা পিঁপড়ার বাচ্চারা ওই কীট-পোকামাকড়দের খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
পান্ডা পিঁপড়া বিপুল সংখ্যায় ডিম দিলেও জীবনকাল কেবল দু’বছর হওয়ায় এবং বন-জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দিন দিন এই সুন্দর ও মায়াবী প্রাণীর সংখ্যা পৃথিবী থেকে ক্রমশ কমেই চলেছে।