হোম > ফিচার > এক্কাদোক্কা

কেন চাই স্বাধীনতা

এনায়েত রসুল

‘স্বাধীনতা’ একটি ছোট শব্দ হলেও এর অর্থ ব্যাপক। সহজ করে বলতে গেলে স্বাধীনতা অর্থ আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার। স্বাধীনতা শুধু একটি তৃপ্তিই নয় স্বাধীনতা একটি নিশ্চয়তাও। নিজের মানসম্মান, ধনসম্পদ ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। আর ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ শুধু আপন অধীনে থাকা—স্ববশ, অবাধ।

স্বভাবতই মানুষ স্বাধীনচেতা। মানুষ চায় অবাধ চলাফেরা। মানুষ চায় তার মতামত প্রকাশের অধিকার। মানুষ নিজের সম্মান বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও খুব সচেতন। এসব কারণে স্বাধীনতার প্রতি রয়েছে মানুষের দুর্বার আকর্ষণ। এতে মানুষের নিরাপত্তা ও আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়। স্বাধীনতার সুখ উপভোগ করার প্রবণতা শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, অন্য প্রাণীর মাঝেও লক্ষ করা যায়। এ কারণেই খাঁচার ভেতর বন্দি পাখি, বাঘ, সিংহ বা বন্য প্রাণীকে আমরা প্রতি মুহূর্তে ছটফট করতে দেখি। কোনো অবলা পশুকেও নিজের ইচ্ছায় বন্দিত্ব মেনে নিতে দেখা যায় না। এ থেকেই বোঝা যায়, ‘স্বাধীনতা’ অনুভবটি কত মূল্যবান প্রতিটি জীবের জীবনে। আর মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব। তার তো প্রতিটি কাজে, প্রতি মুহূর্তেই স্বাধীনতা প্রয়োজন।

স্বাধীনতা একটি নির্মল সুখ। বিভিন্ন দেশের মনীষী ও কবি-সাহিত্যিকরা এই অনুভূতিটির ব্যাখ্যা করেছেন নানাভাবে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তিনি অসংখ্য গান ও কবিতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার প্রতি তার দুর্বলতা ও সমর্থনের কথা লিখে গেছেন। স্বাধীনতার কথা লিখতে গিয়ে উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ সরকারের হাতে তাকে নির্যাতিত হতে হয়েছে বহুবার। বাজেয়াপ্ত হয়েছে কবির একাধিক বই। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে কারাবরণও করতে হয়েছে এই কবিকে। সেই কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার জন্য ছিলেন আপসহীন। বন্দি থাকার সময় একটি গানে তিনি লিখেছেন—

‘এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।

এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল॥’

পরাধীনতার শিকলে বাঁধা কোনো জাতি তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রাচীন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। অন্যান্য জাতির সঙ্গে এককাতারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের স্বাধীনতা। এ সত্যটি প্রকাশ পেয়েছিল অবিভক্ত বাংলার সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কথায়। তিনি বলেছেন, ‘আমার সমস্ত প্রাণ ও সারা জীবনের শিক্ষা নিংড়াইয়া আমি এ সত্য পেয়েছি, পরাধীন জাতির শিক্ষা-দীক্ষা-কর্ম সকলই ব্যর্থ, যদি তাহা স্বাধীনতা লাভের সহায় বা অনুকূল না হয়। পরাধীন দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে মরে যাওয়াও সম্মানজনক।’

পরাধীনতা কোনো সুস্থ মানুষের কাম্য হতে পারে না। পরাধীন জীবন যদি আরামদায়কও হয় তবুও তা সুখের হতে পারে না। এ সত্যটি অন্তর থেকে বিশ্বাস করতেন জন হেইডেন নামে এক মার্কিন মনীষী। তিনি বলেছেন, ‘শিকল যদি সোনা দিয়ে বানিয়ে দেওয়া হয়, তবুও কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না।’ এ কথার অর্থ তো একটাইÑশত প্রলোভন দেখানো হলেও পরাধীনতা কেউ মেনে নিতে চায় না। না চাওয়ার কারণ, স্বাধীনতায় রয়েছে মানুষের জন্মগত অধিকার।

অবিভক্ত ভারতের স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্বাধীনতার দাবি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার প্রথম দাবি স্বাধীনতা। আমার দ্বিতীয় দাবি স্বাধীনতা। আমার সর্বময় দাবিও স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জন আমার একমাত্র দাবি। এছাড়া কোনো প্রাপ্তিই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না।’

বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লবী ও সমাজ চিন্তাবিদ ভলটেয়ার বলেছেন, ‘স্বাধীনতা সবচেয়ে দুর্লভ, কারণ স্বাধীনতা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানজনক একটি অবস্থান এবং সবচেয়ে কল্যাণকর ব্যবস্থা। স্বাধীনতা এতটাই দুর্লভ ও এতটাই মূল্যবান সম্পদ যে, তাকে কখনো কেউ হাতে তুলে দেয় না। বীরত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে নিতে হয়।’ আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতাও আমরা অর্জন করেছি দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আর সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া যে প্রকৃত ও টেকসই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়, এ সত্যটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশের পরম শ্রদ্ধেয় জননেতা শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘এদেশে যদি কোনোদিন পূর্ণ স্বরাজ (স্বাধীনতা) আসে, তবে তা আসবে আমার দেশের চাষির বুকের রক্তে ভেসে।’

স্বাধীনতা অর্জন করা প্রতিটি মানুষের দাবি। তবে স্বাধীনতা অর্জন করার পর প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য সমানভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে আগ্রহী হয় না। সেখানেই বাধে সমস্যা। কারণ স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখা আরো বেশি কঠিন। স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন অকৃত্রিম দেশপ্রেম, দুর্বার সাহস আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের প্রবণতা। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ও বিখ্যাত রাষ্ট্রবিদ উড্রো উইলসন বলেছেন, ‘আপনারা জেনে রাখুন, জনগণ যেখানে সরকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে, একমাত্র সেখানেই স্বাধীনতার ভিত দৃঢ় হয়। অস্তিত্ব টিকে থাকে।’

দেশের কল্যাণ করতে চাইলে দেশকে ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের এক পবিত্র কর্তব্য। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কর্তব্যকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানার ধৈর্য থাকে না। তাকে না জানলে তার ভালো করা যায় না।’

অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ আর জীবনের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা আমাদেরই টিকিয়ে রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা টিকিয়ে রাখব।

মুক্তিযোদ্ধার মা

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা কনফারেন্সে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান

আলী ইমাম : শিশুকিশোরদের আপনজন

মুসলিমদের ভারত বিজয়ের সাক্ষী কুতুব মিনার

রাফির সততা

ঠান্ডা মজা

চোখ জুড়ানো পাখি কাকাতুয়া

চাঁদ সরে যাচ্ছে

ফিলিস্তিনের সবুজ পাখি