হোম > ফিচার > এক্কাদোক্কা

কচ্ছপের দীর্ঘায়ু রহস্য

বিচিত্র কুমার

প্রকৃতির নানা প্রাণীর মধ্যে কচ্ছপদের আলাদা একটি মর্যাদা আছে। ছোটদের জন্য এটা একটি মজার বিষয়—একদিকে ধীরগতি আর অন্যদিকে দীর্ঘায়ু। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসি, কচ্ছপ শত বছর বাঁচে। কিন্তু কী কারণে কচ্ছপ অন্য প্রাণীদের তুলনায় এত দীর্ঘ সময় বাঁচে, তা জানলে আমাদেরও অবাক হতে হয়। চলো, আজ আমরা সেই রহস্য খুঁজে বের করি।

কচ্ছপের দেহের গঠন প্রথম থেকেই তাকে দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে। তাদের খোলস এক ধরনের শক্ত কাঁঠালের মতো। এই খোলস শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং জীবনকে স্থিতিশীল রাখার জন্যও সাহায্য করে। খোলসের ভেতরে কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো থাকে নিরাপদে। তাই আক্রমণকারীরা সহজে কচ্ছপকে আঘাত করতে পারে না। আর যে প্রাণী আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়, তার বাঁচার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

দ্বিতীয়ত, কচ্ছপ ধীরগতি প্রাণী। তারা দ্রুত দৌড়াতে পারে না। শুরুতে এটি যেন একটি অসুবিধা মনে হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ধীর চলাফেরা তাদের দীর্ঘায়ু দেয়। কচ্ছপের শরীর কম খাওয়া এবং কম শক্তি খরচের জন্য তৈরি। ধীর গতির প্রাণীরা কম শারীরিক চাপ পায়, ফলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক দিন স্বাস্থ্যবান থাকে।

কচ্ছপদের জীবনধারণের ধরনও তাদের দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা সাধারণত শান্ত, স্থির এবং নিরীহ প্রাণী। যুদ্ধ বা ধাওয়া-দৌড়ের মতো বিপজ্জনক কাজ তাদের জীবনে কম ঘটে। বিপদ কম ঘটলে প্রাণী দীর্ঘ সময় বাঁচে।

আরেকটি রহস্য হলো কচ্ছপের ধীর মেটাবলিজম। মেটাবলিজম হলো শরীরের শক্তি খরচের প্রক্রিয়া। কচ্ছপের মেটাবলিজম অনেক ধীর। ধীর মেটাবলিজম মানে তাদের শরীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধীরে ধীরে বদলায়, ফলে বয়সজনিত রোগও খুব ধীরে আসে। তাই কচ্ছপ শতকরা জীবনের অনেক সময় ধরে সুস্থ থাকে।

কচ্ছপের খাবারের অভ্যাসও তাদের দীর্ঘায়ুর একটি রহস্য। কচ্ছপ সাধারণত সবজি, ফলমূল, পানিতে থাকা ছোট প্রাণী বা শুঁটকি-জাতীয় খাবার খায়। এই খাবার হজমে সহজ, শরীরকে ভারী চাপ দেয় না। এমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাদ্যাভ্যাসের ফলে কচ্ছপের শরীর সুস্থ থাকে এবং দীর্ঘদিন বাঁচে।

একটা মজার বিষয় হলো, কচ্ছপের দীর্ঘায়ু তাদের ধৈর্যশীল আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। কচ্ছপ কখনো হঠাৎ চঞ্চল হয় না। তারা যেকোনো বিপদকে চিন্তাশীলভাবে মোকাবিলা করে। শিশুদের জন্য এটি শিক্ষণীয় বিষয়—শান্ত থাকা, ধৈর্য ধরা, পরিকল্পনা করা—সবই জীবনে দীর্ঘস্থায়ী সুফল নিয়ে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কচ্ছপদের দীর্ঘায়ুর আরেকটি কারণ হলো তাদের জিন ও মানে দেহকোষ। কচ্ছপের শরীরের কোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। অন্যান্য প্রাণীর মতো তাড়াহুড়া করে কোষ মারা যায় না। ফলে কচ্ছপের দেহ দীর্ঘ সময় ধরে কার্যক্ষম থাকে। বিজ্ঞানীরা কচ্ছপের এই জিনের রহস্য আরো গভীরভাবে গবেষণা করছেন।

কচ্ছপ শুধু ধীর গতির জন্য পরিচিত নয়, তাদের জীবন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। ধীরচেতা হলেও, পরিকল্পিত এবং সুস্থ জীবনযাপন করলে দীর্ঘায়ু পাওয়া সম্ভব। কচ্ছপ আমাদের শেখায়—শান্ত থাকা, ধৈর্য ধরে কাজ করা এবং নিজের স্বাভাবিক জীবনধারা মানা কত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকৃতির এই ধীর, ধৈর্যশীল, কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণী শুধু আমাদের মুগ্ধ করে না, বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাঠও শেখায়।

কচ্ছপের দীর্ঘায়ু রহস্য আসলে আমাদের শেখায়—শান্ত, স্বাস্থ্যবান, পরিকল্পিত জীবনযাপন করলেই দীর্ঘ ও সুন্দর জীবন সম্ভব। কচ্ছপের মতো ধীর, স্থির এবং সচেতন হয়ে চলতে পারলে আমাদেরও অনেক দিন ভালোভাবে বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে।

পান্ডা অ্যান্টের ভয়ংকর হুল

নীল তিমির অজানা কথা

মুক্তিযোদ্ধার মা

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

কেন চাই স্বাধীনতা

যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা কনফারেন্সে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান

আলী ইমাম : শিশুকিশোরদের আপনজন

মুসলিমদের ভারত বিজয়ের সাক্ষী কুতুব মিনার

রাফির সততা

ঠান্ডা মজা