সব পাখিই দেখতে সুন্দর। তবে কাকাতুয়া নামের পাখিটি অন্যতম সুন্দর। আল্লাহতায়ালা এ পাখিটিকে নানা ধরনের উজ্জ্বল রঙ দিয়ে সাজিয়েছেন। সেসব রঙ দেখে আমরা মুগ্ধ হই।
এ পর্যন্ত ৩১৭ প্রজাতির কাকাতুয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের বেশির ভাগই উষ্ণ অঞ্চলের বন-জঙ্গলে বসবাস করে। সে কারণে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলের বন-জঙ্গলে এদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়। উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে এরা জীবনধারণ করে। এরা একত্রে খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত।
কাকাতুয়ারা শান্ত স্বভাবের পাখি। আক্রান্ত না হলে এরা অন্যকে আক্রমণ করে না। এদের কণ্ঠস্বর তীক্ষ্ণ। ঝাঁক বেঁধে উড়তে পছন্দ করে। আর যখন ঝাঁক বেধে উড়ে যায়, তখন নিজেদের মধ্যে স্বর বিনিময় করে।
কাকাতুয়ারা দৈর্ঘ্যে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার (১২ থেকে ২৪ ইঞ্চি) এবং ওজন ৩০০ থেকে ১,২০০ গ্রাম (০.৬৬ থেকে ২.৬ পাউন্ড) হয়ে থাকে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) গতিবেগে ওড়ার রেকর্ড রয়েছে এ পাখির।
কাকাতুয়ারা টিয়া ও ময়নাপাখির মতো মানুষের কথা অনুকরণ করে উচ্চারণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা তা বহুদিন মনেও রাখতে পারে। এ কারণে শৌখিন পাখিপোষকদের কাছে কাকাতুয়া খুব কাঙ্ক্ষিত পাখি। এদের সমগোত্রীয় অন্য পাখিদের মধ্যে রয়েছে তোতা, প্যারাকিটস, লাভবার্ড ও আফ্রিকান গ্রে ম্যাকাওয়ের মতো অভিজাত পাখি। এরা সাধারণত লাল-হলুদ, নীল-সবুজ-হলুদ, সবুজ-কালো-লাল এমন সব উজ্জ্বল ও বৈচিত্র্যময় রঙের হয়।
এছাড়া কয়েক প্রজাতির সাদা কাকাতুয়াও রয়েছে। সব শ্রেণির কাকাতুয়ারই মাথা বড় এবং ঘাড় ছোট হয়। পুরুষ কাকাবুয়ার মাথায় থাকে সুন্দর ঝুঁটি। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করার সময় এরা পা দিয়ে অন্যজনার ঝুঁটি আক্রমণ করে। পা দুটি তুলনামূলকভাবে শক্ত হয়। সেই পায়ের সামনের দিকে দুটি ও পেছনের দিকে দুটি ধারালো নখ থাকে। সেই নখ দিয়ে কাকাতুয়ারা শিকারকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো করে খেতে পারে। এছাড়া গাছের ডাল শক্ত করে ধরে রাখতে নখগুলো সাহায্য করে।
কাকাতুয়ারা গাছের খোঁড়ল, পর্বতের ফাটল ও কাঁটা ঝোপের ভেতর বাসা বানিয়ে বসবাস করে। প্রতিটি কাকাতুয়া একাকী বাসা বানায়। বাসা বানানোর সময় এক কাকাতুয়া অন্য কাকাতুয়ার সহযোগিতা নেয় না।
মা কাকাতুয়া একসঙ্গে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পরে বাবা কাকাতুয়া মা কাকাতুয়ার বাসায় এসে বসবাস শুরু করে আর মিলেমিশে ডিমে তা দেয়।
কাকাতুয়া খুব সুন্দর এবং অভিজাত পাখি। তবে অপরিকল্পিতভাবে বন-জঙ্গল কেটে ফেলার কারণে আজকাল এদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। দ্রুত কমে আসছে এই সুন্দর পাখিটির সংখ্যা। মানবজাতির জন্য অবশ্যই এটা সুখবর নয়। যেহেতু এদের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য প্রধানত মানুষরাই দায়ী, তাই আমাদের কর্তব্য হবে অপ্রয়োজনে গাছপালা, বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বত ধ্বংস না করা।