হোম > ফিচার > এক্কাদোক্কা

চাঁদ সরে যাচ্ছে

তানজিলা মেহের

আমরা যখন রাতের আকাশে চাঁদের দিকে তাকাই, চাঁদকে তখন একই জায়গায় স্থির মনে হয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, চাঁদ অনবরত আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সরে যাওয়াটা যে ইদানীং শুরু হয়েছে এমন নয়। বরং বলা চলে, চাঁদ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে এই সরে যাওয়ার গতি এত ধীর যে, জীবনভর তাকিয়ে থাকলেও আমাদের চোখে তা ধরা পড়বে না।

শুধু গতি কেন? প্রতিদিন একটু একটু করে চাঁদের আকারও ছোট হয়ে যাচ্ছে। এই ছোট হয়ে যাওয়ার বেলাতেও একই কথা ওটা ছোট হচ্ছে অতি ধীরে ধীরে, যা শত বছরেও বোঝা যাওয়ার উপায় নেই। তবে ছোট যে হচ্ছে চাঁদ, দূরে যে সরে যাচ্ছে চাঁদÑএ কথা সত্যি।

চাঁদের এই বদলে যাওয়ার ব্যাপারটি প্রথম ধরা পড়েছিল ইংল্যান্ডের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্যার এডমন্ড হ্যালির চোখে। চোখে বলাটা অবশ্য ঠিক হলো না। ধরা পড়েছিল তার চন্দ্রগ্রহণের মাপজোক আর হিসাবের খাতায়। তিনি বলেছিলেন চাঁদ সরে যাচ্ছে। আগে যেখানে চাঁদ ছিল, এখন আর সেখানে নেই। আগে মানে কোটি কোটি বছর আগে। সে সময় চাঁদকে আরো কাছে এবং আরো বড় দেখা যেত পৃথিবী থেকে। বিজ্ঞানীরা প্রথম এ কথা মেনে নিতে চাননি। আর প্রমাণ না পেলে মেনে নেবেনই বা কেন? শেষমেশ বিজ্ঞানীরা এ মতবাদ যাচাই করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন।

সামুদ্রিক প্রাণী প্রবালের ফসিল বা মরা প্রবাল কীটের খোলস পরীক্ষা করে একসময় বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বয়স হিসাব করে বের করেছিলেন। তাই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল চাঁদের গোপন রহস্য সন্ধান করতে গেলেও প্রাচীন কোনো সামুদ্রিক প্রাণীর সহযোগিতা নিতে হবে। এই প্রাচীন প্রাণীর সন্ধান করতে গিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানীরা একযোগে কাজে নামেন। বহু খোঁজাখুঁজির পর নটিলাস নামে একটি সামুদ্রিক প্রাণীর খোঁজ পান তারা। পৃথিবীতে নটিলাসের

আগমন ঘটেছিল কম করেও ৪০ কোটি বছর আগে। এরা খোলসধারী জীব। বিজ্ঞানীরা বহুদিন লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন ওদের খোলসের ভেতর যে খোপ রয়েছে, তার সংখ্যা কম-বেশি হলেও একটি খোপ থেকে অন্য খোপের দূরত্ব প্রায় সমান। এ খোপগুলো প্রতিদিন একটি করে সৃষ্টি হয়। তবে একটি খোপ থেকে অন্য খোপের মাঝখানে কয়েকটি দৃশ্যমানরেখা ফুটে ওঠে। এগুলোর সংখ্যা কোথাও ২৯টি, কোথাও ৩০টি। গড়ে ২৯ দশমিক ৫ বা সাড়ে ২৯ বলা যায়, যা একটি চান্দ্রমাসের দিন সংখ্যা বলে মেনে নেওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে আসতে চাঁদের সময় লাগে ২৯ দশমিক ৫ দিন বা সাড়ে ২৯ দিন। মজার ব্যাপার হলো, বাচ্চা, মাঝারি বা বুড়ো সব বয়সি নটিলাসের খোপের মাঝের দাগসংখ্যা একই সমান। এর কারণ, খোলসের খোপের মধ্যবর্তী স্থানে প্রতিদিন একটি করে দাগ পড়ে। এর একটিও কম নয়, একটিও বেশি নয়। এখন দেখতে হবে এ থেকে কী করে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন চাঁদ সরে যাচ্ছে বা প্রতিক্ষণে ছোট হচ্ছে? এবার আসা যাক সে প্রসঙ্গে। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে জীববিজ্ঞানীরা পাললিক শিলার ভেতর অনেকগুলো নটিলাসের ফসিল খুঁজে পেয়েছিলেন। তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ওগুলোর বয়স আড়াই কোটি থেকে চল্লিশ কোটি বছর। বিজ্ঞানীরা আড়াই কোটি বছর বয়স্ক নটিলাসের ফসিল পরীক্ষা করে দেখতে পান ওতে প্রতিটি খোপের মাঝখানে দাগ পড়েছে ২৫টি করে। অথচ চল্লিশ কোটি বছর বয়স্ক নটিলাসের খোপের মাঝে দাগ পড়েছে মাত্র ৯টি। সেখানে ৩০ কোটি বছর আগের নটিলাসের ফসিলে দাগ দেখা গেছে ২০টি। এভাবে সময় যত বেড়েছে, দাগের সংখ্যাও তত বেড়েছে। দেখা গেছে, কখনো কখনো পৃথিবীতে মাস হতো ৯, ২০ ও ২৫ দিনে। বর্তমানে হয় ২৮ থেকে ৩১ দিনের মধ্যে। এটাই শেষ কথা নয়। বিজ্ঞানীরা বারবার পরীক্ষা করে, হিসাব করে দেখেছেন চাঁদের গতিবেগ সৃষ্টির পর থেকে একই ধরনের আছে। একটুও কমেনি বা বাড়েনি। অথচ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদ ৯, ২০, ২৫, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ দিন সময় ব্যয় করে। এটা হয় চাঁদ একেক সময় একেক দূরত্বে অবস্থানের কারণে। আর চাঁদ ছোট হচ্ছে বলেও এমন হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

রাফির সততা

ঠান্ডা মজা

চোখ জুড়ানো পাখি কাকাতুয়া

ফিলিস্তিনের সবুজ পাখি

তীর ছোড়ে আর্চার ফিশ

বরিশাল জিলা স্কুল

মোরে ইল

ওয়ালরাস

বিশ্বাসের জাদু

প্রিয় আমার পাঠশালা