হোম > সাহিত্য সাময়িকী > প্রবন্ধ

আত্মজীবনী: যেভাবে বেড়ে উঠি

শহীদ ওসমান হাদি

‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ শিরোনামে শহীদ ওসমান হাদি তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন আত্মজীবনী সিরিজ। দুটি পর্ব আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিও থেকে পর্ব দুটির অনুলিখন করেছেন মাহদি হাসান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তৃতীয় দিনের বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল আত্মজীবনীর প্রথম পর্ব। পরের অংশগুলো সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত ছাপা হবে। আজ ছাপা হলো দ্বিতীয় পর্ব।

নেসারাবাদের জীবন

এরপর আমি নেসারাবাদে ভর্তি হয়ে গেলাম—তখন সম্ভবত ২০০০ বা ২০০১ সাল হবে। ক্লাস ফোরে পড়ি। নেসারাবাদে ভর্তি হওয়াটা ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় টার্নিং পয়েন্ট। সেই গল্পটা আপনাদের সঙ্গে করতে হবে অনেক কারণে—বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা, মাদরাসা সম্বন্ধে আমাদের সাধারণ ধারণা এবং আমার যে কালচারাল লড়াইয়ের সূচনা, এই গল্পটা শুনলে আপনারা নিশ্চয়ই অনেক কিছু রিলেট করতে পারবেন।

আমি আপনাদেরকে নেসারাবাদের গল্প বলব। যখন আমি ক্লাস ফোরে ভর্তি হলাম, ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা বা নেসারাবাদ মাদরাসার সেই যে গ্লোরি—তা আজ হয়তো আর ওভাবে নেই। কিন্তু আমাদের সময়ে মাদরাসার সেই গোল্ডেন এজ বা স্বর্ণযুগ ছিল। আমি যখন ভর্তি হয়েছি, তখন সেখানে ৫০০০ স্টুডেন্ট ছিল; যাদের মধ্যে অলমোস্ট ৪০০০-এর বেশি শিক্ষার্থী আবাসিকে থেকে পড়াশোনা করত। সারা বাংলাদেশের সব থেকে স্কিলড টিচারদের সেখানে একত্র করা হয়েছিল।

সাধারণত বাংলাদেশে মাদরাসা বলতে আপনি যা বোঝেন, এখানকার গল্প শুনলে আপনি সেটার সঙ্গে একে মেলাতেই পারবেন না। যদিও ‘এক্সেপশন ক্যাননট বি এক্সাম্পল’—এটাই সারা বাংলাদেশের সমস্ত মাদরাসার সাধারণ চিত্র না। আমার ভীষণ মনে পড়ে এই মাদরাসার কথা; আমরা যারা একসঙ্গে পড়েছি, তারা ঢাকা মেডিকেল থেকে শুরু করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি—বাংলাদেশের এমন কোনো ইউনিভার্সিটি নেই যেখানে এই মাদরাসা থেকে আমাদের বন্ধুরা, ছোট ভাই বা বড় ভাইয়েরা পড়াশোনা করেননি। শুধু পড়াশোনা করাই না, অনেকে দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে ফ্যাকাল্টি হিসেবেও কর্মরত আছেন।

যখন আমি নেসারাবাদে ভর্তি হই—এর আগে নলসিটিতে থাকাকালীন একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমাদের উপজেলা শহরটা তখন থেকেই দেখতাম কালচারালি বেশ অ্যাক্টিভ ছিল। আজকে আমার এলাকার কারো মনে আছে কি না জানি না, তবে আমার মনে পড়ছে আমাদের উপজেলায় দুটো লোকাল ব্যান্ড ছিল—একটি ‘লোকালয়’ আর অন্যটি ‘তেপান্তর’। এলাকার ভাইয়েরা ড্রাম বাজাতেন, গান গাইতেন; ওনারা মাঝেমধ্যে চৌমাথায় বা মার্চেন্ট স্কুলের মাঠে ছোট ছোট কনসার্ট করতেন। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে সেসব দেখতে যেতাম; কারণ আব্বার ছেলে হয়ে কনসার্ট দেখতে যাওয়াটা তো খুবই বিপজ্জনক ছিল! আমার বন্ধুরা আমাকে আড়াল করে রাখত যেন কেউ চিনে না ফেলে।

কেন যেন ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে আজ মনে পড়ছে যে—ব্যান্ডে যখন ড্রাম বাজানো হতো, আমার মনে হতো আমি বড় হলে ড্রাম বাজাব। বড় বড় ড্রামগুলো যখন ওভাবে বাজাত, আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগত। বাসায় এসে মুড়ি রাখার বড় বড় বয়ামগুলো তিন-চারটা সাজিয়ে স্টিক নিয়ে ইচ্ছামতো বাজাতাম।

এই কথাগুলো কেন বলা—নলসিটিতে তখন মিলাদুন্নবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ক্লাস টু-থ্রি থেকেই আমি নাম দিতাম। উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা—এগুলোতে মফস্বল শহরে পুরস্কারও পেতাম। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত এভাবেই চলেছে। এরপর যখন নেসারাবাদে আসি, নেসারাবাদ আমাকে এক বিরাট সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ তৈরি করে দিল। একে তো এখানকার পড়াশোনা ছিল বাংলাদেশের সেরা; মাদরাসার ডিসিপ্লিন ছিল অসাধারণ—অলমোস্ট আর্মি ট্রেনিংয়ের মতো পাংকচুয়ালিটি যাকে বলে।

এর পাশাপাশি পড়াশোনাটা ছিল অসাধারণ, কারণ দেশের সেরা শিক্ষকরা ওখানে পড়াতেন। পড়াশোনা আর ডিসিপ্লিন হয়তো অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানেও ছিল, কিন্তু এখানকার স্বকীয়তা ছিল এখানকার সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া। বাংলাদেশে আর কোনো মাদরাসায় তখন এমন ছিল কি না আমার জানা নেই। আমাদের মাদরাসার যে বার্ষিক ‘বিচিত্রা অনুষ্ঠান’ হতো, সেখানে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, লোকগীতি, জারি থেকে শুরু করে একক অভিনয়—এমন কোনো পালাপর্ব নেই যার ওপর প্রতিযোগিতা হতো না। বক্তৃতা আর কবিতা তো ছিলই।

আমাদের সেই বার্ষিক বিচিত্রা অনুষ্ঠানটা অনেক বড় পরিসরে হতো। সেখানে একই মঞ্চে প্রথমে আরবি নাটিকা, তারপর ইংলিশ নাটিকা এবং এরপর বাংলা নাটক মঞ্চস্থ হতো। এমনকি আমার মনে আছে সর্বশেষ রবীন্দ্রনাথের ‘মুকুট’ নাটকটিও মঞ্চস্থ হয়েছিল। অবশ্যই সেখানে কোনো নারী ক্যারেক্টার ছিল না; নারী চরিত্রকে অন্যভাবে ফুটিয়ে তোলা হতো। সেখানে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার থেকে শুরু করে ডিসি—সবাই উপস্থিত থাকতেন। লম্বা সময় ধরে চলা সেই আয়োজনগুলো ছিল এক কথায় অসাধারণ। আমার যেটা বিশেষভাবে মনে পড়ে—সেই বিচিত্রা অনুষ্ঠানে ছোটবেলা থেকেই আমি উপস্থাপনা করতাম।

আমি খুব ভালো উপস্থাপনা করতাম। যখন মঞ্চে দাঁড়াতাম, ডায়াসে আমাকে দেখা যেত না বলে পাশে দাঁড়াতে হতো—তখন থেকেই আমি উপস্থাপনা করি। মানে ক্লাস ফোর, ফাইভ, সিক্স থেকেই। আমার মনে পড়ছে, ফোরে থাকাকালীন আমার উপজেলায় যেসব মাহফিল হতো, সেখানে উপস্থাপনা করার জন্য আমাকে আব্বার কাছ থেকে বলে-কয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। নেসারাবাদে যাওয়ার পর একদম ছোটবেলা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত যেহেতু আমি ওখানেই ছিলাম, এই সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাকেই উপস্থাপনা করতে দেওয়া হতো। সবাই আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং আদর করতেন। আমি যখন খুব ছোট, তখন মাইক হাতে নিয়ে মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে উপস্থাপনা করতাম, কারণ ডায়াসে দাঁড়ালে আমাকে দেখা যেত না।

আমার মনে আছে, আমাদের যে বার্ষিক অনুষ্ঠানটা হতো, আমি সাধারণত উপস্থিত বক্তৃতা, বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা, বাংলা-ইংরেজি-আরবি কবিতা আবৃত্তি, একক অভিনয়, রচনা এবং কুইজে নাম দিতাম। আমার বড় ভাই, যিনি আমার অনেক বড়, তিনি ভীষণ ভালো গাইতেন। তিনি বক্তৃতা থেকে শুরু করে এই বিষয়গুলোতে তো ভালো ছিলেনই, এর পাশাপাশি নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, হামদ ও নাত-এ রাসুল খুব ভালো গাইতেন এবং প্রচুর পুরস্কার পেতেন। আমার মেজো ভাইও খুব ভালো বক্তৃতা করতেন।

আমার মনে আছে, একবার এমন হয়েছিল যে—বার্ষিক বিচিত্রা অনুষ্ঠানে যখন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, আমি তখন ‘ক’ শাখায় মানে ক্লাস ফাইভে। আমার মেজো ভাই ‘খ’ শাখায় আর বড় ভাই ‘গ’ শাখায়। পুরস্কার বিতরণের সময় শুধু আমাদের নামই ঘোষণা করা হচ্ছিল—‘ক’ শাখায় বক্তৃতায় প্রথম আমি, ‘খ’ শাখায় আমার মেজো ভাই এবং ‘গ’ শাখায় আমার বড় ভাই। মানে সিরিয়াল দিয়ে শুধু আমরা তিন ভাই-ই মঞ্চে যাচ্ছি! প্রিন্সিপাল হুজুর থেকে শুরু করে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন—এটা ছিল একটা দেখার মতো ব্যাপার। আজকে আমি খুবই অনার্ড ফিল করি যে, এমন একটা চমৎকার সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা বড় হয়েছি।

নেসারাবাদে বছরে একবার মাহফিল হতো—লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতো সেখানে। দুদিনব্যাপী সেই মাহফিলে আল্লামা সাঈদী সাহেব থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রথিতযশা আলেমরা যেতেন। আমি যেমন বিচিত্রা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতাম, তেমনি মাহফিলের সময়ও আমার শিক্ষকরা আমাকে দিয়ে উপস্থাপনা করাতেন। আমি নিজেই আজ অবাক হই যে—আমি সম্ভবত সেসব সৌভাগ্যবান ছাত্রদের একজন, যারা জীবনে শিক্ষকদের এত ভালোবাসা পেয়েছে। এত ভালোবাসা মানে হাজারো গল্পের ভিড়ে আমি আজ নিশ্চয়ই অন্তত তিনজন শিক্ষকের নাম বলব—একজন পিরোজপুরী হুজুর (যিনি এখন শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছেন), একজন বিন্নাপড়ার স্যার, আর অন্যজন শরীয়তপুরী হুজুর। এঁদের গল্প আমি শুধু নামেই বলে রাখলাম; আমার একটা লক্ষ্য আছে, সেই লক্ষ্যটা যেদিন পরিপূর্ণ হবে সেদিন আমি বলব কেন আমি তাদের নাম বললাম।

আমি খুবই এলোমেলো গল্প বলছি। আপনারা ধরে নিন আমার সামনেই বসে আছেন; আমি গল্পবাজ মানুষ, আমার ভাই-বন্ধুরা খুব মনোযোগ দিয়ে আমার গল্প শোনে। তাই আপনাদের সঙ্গেও ঠিক এভাবেই গল্প করছি। নেসারাবাদে আমরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা কাটিয়েছি। আজকে আমাদের যে রাজনৈতিক সচেতনতা, সেখানে নির্বাচন তো খুব ছোট ব্যাপার। নলসিটিতে থাকতে যে বুনিয়াদটা তৈরি হয়েছিল—প্রথম যখন বিএনপি পার্টি অফিস বা নির্বাচন এগুলো দেখে দেখে সংস্পর্শে আসলাম—সেটা নেসারাবাদে এসে আরো পরিণত হয়েছে।

পারিবারিক আবহ ও আব্বার প্রভাব

দুটো ব্যাপার বলে রাখা দরকার। আমাদের বাসায় আমরা ভাই-বোনরা সবাই এখনো প্রচণ্ড গল্পবাজ; আমরা একত্র হলে আমাদের সারা রাত কেটে যায় শুধু গল্প করতে করতে। আমাদের বাসায় রাজনৈতিক আলাপও খুব হতো, আব্বা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে গল্প করতেন। এগুলো আমাদের দারুণ কাজে লেগেছে। আর পরিবারের ব্যাপারে সব থেকে ভালো লাগার বিষয় ছিল—আমরা যখন হোস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরতাম, তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতাম। সেই গল্পগুলো ছিল ভীষণ প্রাণবন্ত।

বড় ভাইয়ের পিএইচডি থিসিস কতদূর গেল, মেজো ভাইয়ের পড়াশোনার কী অবস্থা, ছোট আপুর হোস্টেল জীবন কেমন চলছে—এগুলো নিয়ে কথা হতো। আমি সর্বশেষ কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম বা সামনে কী কী প্রতিযোগিতা আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হতো। এমনকি আগামীকাল হয়তো আমার কোনো বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আছে—আমি বাসায় সেটা প্র্যাকটিস করছি, কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছি, বড় ভাই সেটা ঠিক করে দিচ্ছেন, ছোট আপু মন দিয়ে শুনছেন—এই পুরো চর্চাটা আমাদের বাসায় ভীষণভাবে ছিল। আর নেসারাবাদ আমাকে এমন এক বড় পরিসর তৈরি করে দিল, যা আমার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে ভীষণ সাহায্য করেছে।

নেসারাবাদে সর্বপ্রথম গিয়ে দেখি—সেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় বিরাট আয়োজনে। পাঁচ হাজার স্টুডেন্ট, সেখানে ভিপি, প্রো-ভিপি, জিএস, এজিএস—এসব পদ ছিল। আবার প্রতি ক্লাসে ইউনিট ছিল; যেমন একেকটা ক্লাসের নাম ছিল ইবনে সিনা ইউনিট, শরীয়তুল্লাহ ইউনিট, তিতুমীর ইউনিট। এই একেকটা ইউনিটে আবার ক্লাস পরিচালক, সহকারী পরিচালক, অর্থ পরিচালক এবং রিপোর্টার ছিল।

এই গল্পটা আপনাদের এজন্য লম্বা করে বলি—নেসারাবাদে প্রতি বৃহস্পতিবার চতুর্থ পিরিয়ডের পরে এক ঘণ্টা ‘সাপ্তাহিক জলসা’ অনুষ্ঠান হতো। এই অনুষ্ঠানে কিরাত, হামদ-নাত, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোকসংগীত এবং নাটিকা বা একক অভিনয় হতো। এই অনুষ্ঠান কারা পরিচালনা করবে বা কীভাবে হবে, তা নির্ধারণের জন্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় ক্লাসের ইউনিট নির্বাচন হতো। একদম ক্লাসের যে প্রধান—ক্লাস পরিচালক, তারপর সহকারী পরিচালক; এরপরে প্রতি ক্লাস থেকে পাঁচ-দশ টাকা করে সবাই ছাত্র সংসদে কন্ট্রিবিউট করত, সেটা তোলার জন্য একজন অর্থ পরিচালক। আর অনুষ্ঠান কেমন হচ্ছে, কার তেলাওয়াত, সংগীত বা বক্তৃতা কেমন হলো—সেটা আবার পড়ে শোনানোর জন্য একজন রিপোর্টার ছিল। তিনি রিপোর্ট করতেন এবং পুরো অনুষ্ঠানে একজন নির্দিষ্ট শিক্ষক সভাপতিত্ব করতেন।

আমি সম্ভবত ক্লাস ফোর থেকেই... আসলে এটা বলে রাখা ভালো যে, যখন নলসিটিতে ওয়ান, টু, থ্রিতে পড়তাম, তখনও আমি আমার ক্লাসে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হতাম। তখন সরাসরি খাতায়-কলমে ভোট হতো এবং সেই ভোটে ক্যাপ্টেন নির্বাচন করা হতো। নিয়ম ছিল, যে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হবে সে ক্লাসের সবাইকে খাওয়াবে; ওয়ান টু থ্রি-র সময় আমি এটা করতাম।

একটু ফাঁকে আমার আব্বার কথা বলে রাখা ভালো। আব্বার গল্প শুরু করলে এক ঘণ্টায়ও শেষ হবে না। আপনারা আজকে আমাকে যতটুকু সাহসী, স্পষ্টভাষী বা প্রতিবাদমুখর মনে করেন—তার সমস্ত গুণ অলমোস্ট আব্বার কাছ থেকে পাওয়া। আমরা ভাই-বোন মোটামুটি সবাই আব্বার কাছ থেকে কম-বেশি ইনফ্লুয়েন্সড হয়েছি। আব্বা আমাদের কমিউনিটির মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব থেকে সোচ্চার এবং প্রতিবাদী ছিলেন। আমাদের পুরো কমিউনিটিতে তাকে ‘জজবাওয়ালা’ মানুষ হিসেবে চিনতেন। শুধু ধর্মীয় ইস্যুতে না, সমস্ত সামাজিক ইস্যুতে আব্বার মিছিল, আব্বার স্লোগান এবং স্পষ্টবাদিতা আমাদের এত বেশি আলোড়িত করেছে যে, আমরা এখনো সেই প্রভাব থেকে বের হতে পারিনি।

এজন্য আমাদের ভাই-বোন সবার মধ্যেই এই লিডারশিপ স্কিলটা পরিবার থেকেই এসেছে এবং এর চর্চাটাও ছিল। আমরা ভাই-বোন সবাই মোটামুটি কাছাকাছি চরিত্রের; আমি হয়তো আব্বার এই প্রতিবাদের জায়গাটা একটু বেশি পেয়েছি, তবে সব ভাই-বোনই আমরা আব্বার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো পেয়েছি।

যে স্বপ্ন ছফাকে ঘুমোতে দেয়নি

বই কীভাবে বিপ্লবকে প্রভাবিত করে?

কবিরা যা বলেন

৭০ বছর পূর্তি: বাংলা একাডেমির ভবিষ্যৎ

উপন্যাস : অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ

৩৬ জুলাই: ঐতিহ্যবাদী বিপ্লব ও বাঙালি মুসলিম ফিউচারিটি (১ম পর্ব)

লেইস ফিতা ও জাদুর বাক্স

হুমায়ূন আহমেদ ও বাংলা কথাসাহিত্যের ঘরে ফেরা (শেষ পর্ব)

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, সীমান্ত ও আজকের লড়াই

দুর্লভ লেখা: ইকবালের ইতিহাস-দর্শন