জসীম উদদীন
জীবন্ত ইতিহাস
বাঙালি মুসলমানের যে এক
জীবন্ত ইতিহাস
শিল্পীর মতো এ জাতিরে তুমি
গড়িয়াছ বারো মাস।
প্রতি নিঃশ্বাসে আমাদের তরে
আনিয়াছ কল্যাণ
এনেছ গরব শৌর্যবীর্য
আর কত সম্মান।
আজিকে বসিয়া বিশ্রাম আসনে
ধ্যানের নয়ন ভরি
চাহিয়া দেখিছ নিজ সৃষ্টিরে
বিস্ময়ে প্রাণ ভরি।
এ জাতির প্রতি অণুপরমাণু
প্লাবিত তোমার দানে
তোমার কাহিনি বাজিবে সতত
সর্বকালের গানে।
সুফিয়া কামাল
জ্ঞানের সাধক
যে দেউটি নিভে গেছে তারই জ্বালা
শত দ্বীপ শিখা
জ্বলছে যে ঘরে ঘরে। ভাস্বর লিপিকা
লেখা হয়ে গেছে কাল পাষাণ প্রাচীরে
কাল সিন্ধু নীরে
সে প্রাণ প্রবাহ বহে চলে
অবিরাম গতি তার। গভীর অতলে
নিহিত সে রত্নের সম্ভার
থরে থরে কত উপহার
সুরঞ্জিত মহামূল্য নিধি
বক্ষে করি বিশাল পরিধি
মানব কল্যাণে
নিত্য সে যে অফুরন্ত দানে।
জ্ঞানের সাধক তার মহৎ জীবনে
গভীর সাধনালব্ধ সুচিন্তিত ধ্যানে
যা কিছু পেয়েছে তারে ভরিয়া অঞ্জলী
ছড়ায়ে দিয়েছে। সত্য প্রকাশে কেবলি
প্রয়াস পেয়েছে বার বার,
স্রষ্টার অমৃত বাণী করেছে প্রচার
যুগে যুগে সে বাণীর স্রোতধারা বয়ে
কাল হতে কালান্তরে চলিবে
তাহার স্মৃতি লয়ে।
“আকরম খাঁ একটি ব্যক্তি মাত্র ছিলেন না, অন্যান্য অনেক নেতার মত তিনি শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানও ছিলেন না। তিনি ছিলেন একটা যুগের প্রতিনিধি- যুগের প্রতীক, স্বয়ং একটা যুগ। বাহির হইতে তাঁর ব্যক্তিত্বের বিরাটত্ব, তাঁর সাফল্যের বিপুলতা, তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক জীবনের বিস্তৃতি দেখিলে বলিতেই হইবে তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। মওলানা সাহেবের বিরাট ব্যক্তিত্বরূপী সে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিন্তানায়ক ও সমাজ সংস্কারকের শ্রেষ্ঠ মহৎ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটিয়াছিল অপূর্ব সামঞ্জস্যে।”
-আবুল মনসুর আহমদ
সৌজন্যে : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত আবু জাফর সংকলিত ও সম্পাদিত ‘মওলানা আকরম খাঁ’।