মৌলভীবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেছেন, আমি একটা বোঝা মাথায় নিয়ে এখানে এসেছি। সেটি হলো নির্বাচন। এটি আর দশটা নির্বাচনের মতো না। একসঙ্গে দুটি নির্বাচন হওয়ার কথা। গণভোট হওয়ার কথা। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, এটি একদিনের না, শত বছরের নির্বাচন। সামনের একশত বছর বাংলাদেশ কোন পথে যাবে সেটি সিলেকশন করার নির্বাচন। পাঁচ বছর পরে একদল ক্ষমতায় এলো আরেক দল ক্ষমতা থেকে গেলো, এই নির্বাচন না। আমার মোস্ট প্রায়োরিটির জায়গাটা এখানে। এই নির্বাচন যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে নিরপেক্ষভাবে করতে পারি, তাহলেই সার্থক হবে।
নতুন এই জেলা প্রশাসক আরো বলেন, জেলা প্রশাসক হলেন অনেকটা ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেনের মতো। ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন না। ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন হলে অনেক ক্ষমতা তার হাতে। ক্যাপ্টেন ঠিক করেন কখন কে বল করবে। তুমি আসো, তুমি যাও, তুমি এক নাম্বারে নামো তুমি দুই নাম্বারে নামো। আর ফুটবলের ক্যাপ্টেন কিন্তু একটা চলন্ত অবস্থার মধ্যে থাকেন। তিনি খেলার মাঝখানেই নির্দেশনা দেন। তুমি ডানে যাও বামে যাও বা প্রধান যে কোচ তার নির্দেশনা মানে। সুতরাং এসব বাস্তবতা আপনারা বুঝতে পারবেন। এখানে প্রতিটি দপ্তরের প্রধান আছেন। তাদের নির্দিষ্ট রেসপন্সিবিলিটিস আছে। আমার দায়িত্বটা হবে ওই ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেনের মতো। তাদের সেনসিটাইজ করা। যাতে জনগণের সেবার জায়গাটায় কোনো কম্প্রোমাইজ না করা হয়। সেবার জায়গাটা যাতে উন্মুক্ত থাকে সকলের জন্য।
তিনি বলেন, আর আমাদের জেলা প্রশাসনের কথা বলি- জেলা প্রশাসন একটা আড়াইশত বছরের ওপরের একটা প্রতিষ্ঠান। এটা জনগণের প্রতিষ্ঠান। জনগণের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান না। আমি এ কথা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, গত জুলাই অভ্যুত্থানে নিশ্চয়ই সামগ্রিকভাবে বেসরকারি প্রশাসন বলতে যেটা বুঝায় সেটা দেখেছেন, তাদের ভূমিকা দেখেছেন। আর অন্যদের ভূমিকা আমি বলতে চাচ্ছি না। এরপরও সরকারের প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের ঘাড়ে সব কিছু এসে পড়ে। দায় আসলে এড়ানোর সুযোগ থাকে না। আমাদের জেলা প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তা জনগণের সাথে থাকবেন। সততা, যোগ্যতা, মেধা ও ইনসাফের ভিত্তিতে জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাবেন তারা।
মাদক নির্মূলে নতুন ডিসি আরও বলেন, এখন যেহেতু জেলা প্রশাসকের কাছে অনেক দায়িত্ব, জেলা পরিষদ, পৌরসভা আমরা আমাদের লেভেলে চেষ্টা করে যাবো।
তিনি আরো জানান, এ জেলায় ইতোমধ্যে নয়টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অনুমোদন বলতে নানান পর্যায়ে অনুমোদন আছে। যেমন সদর জেনারেল হাসপাতাল আড়াইশত থেকে পাঁচশত বেড হলে এটার অর্গানোগ্রাম পাস করার বিষয় আছে। জনবল নিয়োগ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। আর অন্যান্য প্রজেক্টের বিষয়ে আমি সার্বিক নজরে আনবো।
সকলের সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, এ প্রতিষ্ঠান একদিনে তৈরি হয়নি। এ প্রতিষ্ঠানের যা কিছু ভালো সেটি জনগণের জন্যে। জনগণের পাশে জেলা প্রশাসন ছিল এবং থাকবে। সকল ভালো কাজে জেলা প্রশাসনকে পাশে পাবেন।
রোববার (২৩ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নবাগত জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল এর সাথে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সাংবাদিকেরা নবাগত জেলা প্রশাসককে স্বাগত জানান। এ সময় সাংবাদিকেরা জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে শহরের যানজট, জেলায় পর্যটন, মাদকের ছড়াছড়ি, কিশোর অপরাধ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এরপর জেলা প্রশাসক জানান, মৌলভীবাজারের মানুষের জন্য দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন দাপ্তরিক সেবা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের গঠনমূলক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তানভীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসমা সুলতানা নাসরিন প্রমুখ।