ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে 'জুলাই সনদের' আইনি ভিত্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ দাবি জানান তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা সবাইকে নিয়ে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়বো। তবে এর আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াত কোন জোট গঠন করবে না, তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে। আর এই সমঝোতার স্বার্থে জামায়াত ঘোষিত সংসদ সদস্য প্রার্থী তালিকায়ও অনেক পরিবর্তন আসতে পারে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে ওসমানী এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছান তিনি। এরপর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
আমির বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জামায়াতের শ্রেষ্ঠ দাবি। তাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সাধারণ মানুষ সমর্থন দেবে বলে বিশ্বাস করি।
ডা. শফিকুর রহমান তৃতীয়বারের মতো দলের সর্বোচ্চ পদ আমিরে জামায়াত নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বুধবার সিলেটে এলেন।
ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে আমিরে জামায়াতকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে কয়েক সহস্রাধিক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় তাকে সিলেট নগরীতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় এয়ারপোর্ট থেকে চার কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার দু’পাশে শত শত মানুষ হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান।
টানা বিদেশ সফর শেষে তিনি মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন। আর দেশে ফিরেই দু’দিনের সাংগঠনিক সফরে তিনি সিলেটে এলেন। বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলার সবকটি আসনের নেতাকর্মীদের সাথে পৃথক মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।
মতবিনিয়কালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কিনা এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগই তো নির্বাচন চায় না। তারা তো দেড় দশক সুযোগ পেয়েও নির্বাচন না করে জোর করে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। দেশের কোটি কোটি তরুণ ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। জনগণ আওয়ামী লীগের মতো দলকে নির্বাচনে মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এবার হবে তাৎপর্যপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেছেন, ‘জোট নয়, দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে নির্বাচনি সমঝোতা গড়বে জামায়াত।’
জামায়াত আমির তার সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘নানাবিধ কারণে ইসির বেঁধে দেয়া ৩০ অক্টোবর প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবাই ভোটার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। বিদেশে আমাদের লাখ লাখ প্রবাসী রয়েছেন। সবাই যাতে ভোটার হতে পারেন সে কারণেই আমরা ইসিকে আরো কমপক্ষে ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন সবসময়। আল্লাহর ইচ্ছায় জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।’
এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-২ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমেদ, সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানি, হবিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী ও সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহজাহান আলী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের প্রার্থী সিলেট মহানগরী জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রব, সিলেট-১ আসনের প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমানের নির্বাচনি পরিচালক হাফিজ মাওলানা আবদুল হাই হারুন, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হাফিজ মাওলানা মিফতাহ উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।