প্রতিবছর ১২ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের শেষ সময়েও মানুষ মর্যাদা ও শান্তি নিয়ে বাঁচতে পারে। যখন কোনো রোগ আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, তখন এই সেবা রোগীর যন্ত্রণা কমিয়ে তাকে আরাম ও ভালোবাসা দিয়ে শেষ সময়টা সুন্দর করে তোলে।
বাংলাদেশে এই সেবার প্রয়োজন ও বাস্তবতা
বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছরের বেশি। ফলে ক্যানসার, কিডনি ও হার্টের রোগসহ অনেক কঠিন অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষ এই সেবার প্রয়োজন হলেও খুব কম মানুষই তা পান । এই সেবা মূলত ঢাকায় সীমাবদ্ধ, গ্রামে বা দূরবর্তী এলাকায় তা প্রায় নেই।
ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
২০০০ সালের দিকে কিছু ব্যক্তি ও এনজিও এই সেবা শুরু করে। তখন এটি ছিল দাতব্য কাজ। এখন অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল যেমন বিএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বারডেম—এই সেবা দিচ্ছে। কিছু এনজিও হোম কেয়ার ও শহরতলিতে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এই সেবাকে উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পৌঁছানো দরকার। শুধু ক্যানসার নয়, হার্ট, কিডনি ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগেও এই সেবা দরকার। টেলি-প্যালিয়েটিভ কেয়ার চালু করলে গ্রামেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া যাবে।
চ্যালেঞ্জ ও সরকারি বাধা
সমাধান : সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব
সরকারনীতি ও অর্থায়ন করবে আর এনজিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ও সেবা পৌঁছে দেবে। এই মিলিত উদ্যোগই পারে সবার জন্য যন্ত্রণামুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে।
ক্যারিয়ার ও প্রশিক্ষণ
এই সেবায় ডাক্তার, নার্স, সাইকোলজিস্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কারদের জন্য অনেক সুযোগ আছে। বিএমইউতে এমডি কোর্স চালু আছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নত কোর্স চালু করা দরকার।
উপসংহার
জীবনের শেষ অধ্যায়েও মানুষ যেন ভালোবাসা ও মর্যাদা পায়—এই বার্তা দেয় এই দিবস। আসুন, সবাই মিলে এমন সমাজ গড়ি, যেখানে শেষ সময়েও কেউ একা না থাকে। ‘ভয় নেই, আমরা তোমার পাশে আছি। তোমার কষ্ট দূর করার দায়িত্ব আমাদের।’
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন), জেরিয়াট্রিশিয়ান
প্যালিয়েটিভ কেয়ার স্পেশালিস্ট, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল