হোম > ফিচার > নারী

আনন্দ অশ্রুতে শহীদদের মায়েরা

হাসিনার ফাঁসির রায়

এমরানা আহমেদ

হাসিনার ফাঁসির রায়ে খুশি শহীদ হামিদুর রহমান সাদমানের মা কাজী শারমিন আক্তার। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরও থামছে না শহীদ সাদমানের মায়ের কান্না। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার চোখেমুখে দেখা গেছে সন্তান হারানোর হাকাকার। রায় শুনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমার দেশকে সাদমানের মা কাজী শারমিন আক্তার বলেন, ‘হাসিনার রায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমার সন্তান তো আর ফিরে আসবে না।’ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর না করা পর্যন্ত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তিনি পুরোপুরি খুশি হতে পারছিলেন না।

শহীদ সাদমানের স্মৃতিচারণ করে কাজী শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল। কুমিল্লা সিসিএন পলিটেকনিকের প্রকৌশল বিভাগে লেখাপড়া করত। কুমিল্লা মডার্ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেই প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কুমিল্লা সিসিএন কলেজে ভর্তি হয়। পরে জুলাই আন্দোলন চলাকালে ইন্টার্নি করার জন্য ঢাকায় চলে আসে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদমান ছিল বড়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর মিছিলে যোগ দিতে কেরানীগঞ্জ থেকে গেঞ্জি পরে বন্ধু রাফিসহ সাদমান বংশাল থানার সামনে এলে পুলিশের গুলি সাদমানের বুকে লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই সাদমান মারা যায়।’

শহীদ সাদমানের মা কাজী শারমিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘হাসিনা অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। সে আমার বুক খালি করছে, তাকে একবার ফাঁসি দিলেও তার বিচার কম হবে বলে আমার মনে হয়। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। তা না হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে না। আমি তখনই পুরোপুরি খুশি হব যখন শুনব হাসিনাসহ তার পলাতক দোসরদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে।’

শহীদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা আমার দেশকে বলেন, ‘আমার ছেলে হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিজয় মিছিলে গিয়ে উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাতবরণ করে। আমার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছিল জাহিদ। আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমার ছেলে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমার জীবনের আনন্দ-উল্লাস সব শেষ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকতে হবে, তাই বেঁচে আছি। ছেলের শোকে সাত মাসের মাথায় আমার স্বামীও মারা যান। আমার ছোট ছেলে কোলোন ক্যানসারে আক্রান্ত। আমার আব্দুল্লাহকে হারানোর মধ্য দিয়ে আমার জীবনের সবকিছুই আমি হারিয়ে ফেলেছি। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। আমার ছোট ছেলে তার ভাই হারানোর কষ্ট, তার বাবা হারানোর কষ্ট আর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আমার দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে। তার একটাই কথা—‘আমার কিছু হলে আমার মা কী নিয়ে বাঁচবে?’ ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান নূর, ওবায়দুল কাদের এবং আর অন্য আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করছি। এ রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়।” তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে এনে বাংলাদেশের মাটিতে জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করা উচিত। দিনশেষে এটুকু যদি দেখে যেতে পারি।’ তিনি কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা কীভাবে বুঝবে সন্তানহারা মায়ের কষ্ট।’ হাসিনার রায় দ্রুত কার্যকর হলে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুই হবে না বলে জানান তিনি।

শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার আমার দেশকে বলেন, ‘আমি এখনো ঘুমাতে পারি না। আমার মেয়ের কী অপরাধ ছিল? নাঈমার নিরাপদ আশ্রয় নিজ বাসা। সেখানে আমার চোখের সামনেই পুলিশ আমার মেয়েকে টার্গেট করে গুলি করে। ওর মাথার মগজ-রক্ত আমার শরীরে এখনো লেগে আছে। আমি এখনো ভুলতে পারিনি সেই দিনের কথা। মেয়ের কথা মনে পড়ে কত রাত নির্ঘুম কেটে যায়। আমাদের সন্তান হত্যার এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পর রায় পেয়েছি। আমি শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতের এই রায়ে সাধুবাদ জানাই। খুনি হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের যে ফাঁসির রায় দেওয়া হলো তাতে আমরা পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট নই। যখন এ রায় কার্যকর হবে, তখন আমরা পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হব। তবে সাবেক আইজিবি আল মামুনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার রায়টি আমরা শহীদ পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারছি না। তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। একই সঙ্গে আমার মেয়েকে যে পুলিশ গুলি করেছে, তাকে বের করে তার ফাঁসি কার্যকর করা হোক—এটাই সব শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের সবার চাওয়া বলেই আমি মনে করি। শহীদ নাঈমা সুলতানার পরিবারের পক্ষ থেকে সব আইনজীবীর জন্য দোয়া ও শুভকামনা আর সাধুবাদ জানাই।’

শহীদ সিয়ামের মা লাকি খাতুন আমার দেশকে বলেন, ‘সব শহীদের মায়ের বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে। সবসময় আল্লাহর কাছে বিচার চাইছি। আমরা তো ছেলে পাব না; তবে শুনে খুশি হয়েছি।’ ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচার কার্যকর করার দাবি জানান লাকি খাতুন।

শহীদ হাফেজ সিয়াম ফাউন্ডেশনের পরিচালক আবদুস সালাম জানান, ‘এ রায় কার্যকর করার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী রাজনীতিবিদদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা জুলাই শহীদদের ও আহতদের পরিবার হামলার শিকার হতে পারে।’ এছাড়া শহীদ সিয়ামকে যারা কবরস্থানে দাফনে বাধা দিয়েছিল, তাদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।

মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া তানভীরের মা বিলকিস জামান বলেন, ‘জীবদ্দশায় রায় কার্যকর দেখতে চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘সব শহীদের মায়েরা আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন। সবই আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে।’ সাবেক আইজিপির রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নন শহীদ তানভীরের মা বিলকিস জামানও।

শহীদ আহনাফ আহমেদের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘আমাদের সন্তান হত্যার এক বছর পার হওয়ার পর আজ আমরা রায় পেয়েছি। এ রায়ে আদালতকে ধন্যবাদ জানাই, কিন্তু পরিপূর্ণ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আশ্বস্ত হতে পারছি না। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ায় রায়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। হাসিনার মতো তারও মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হোক, তা দেখতে চায় শহীদদের পরিবারগুলো। ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণার পরে এ দাবি করেন তারা। আদালত চত্বরে উপস্থিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সৈয়দ মুনতাসির রহমানের বাবা সৈয়দ গাজীউর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে গুম-খুনের অপরাধ করেছে, তাতে তার বিচার ১৪ হাজার বার ফাঁসি দিলেও শেষ হবে না। তবে মানুষকে তো একবারের বেশি ফাঁসি দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যেক শহীদ পরিবারের চাওয়া—এই ফাঁসিটা যেন দৃষ্টান্তমূলক হয়, প্রকাশ্যে হয়। তবেই মানুষ শান্তি পাবে।’

আফরিদার সাফল্যের রহস্য

কর্মব্যস্ত নারীর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন

নারী ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে সামিনার শিল্পযাত্রা

ইসলামে নারীর অধিকার

বুটিকস শিল্পের নীরব বিপ্লবী‌ ফারজানা আফরিন

‘কর্ডিয়াল কেকস’: মিষ্টি স্বপ্নের অভিযাত্রা

তাবাসসুম তিথির বিজয়গাথা

ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা

যৌতুকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে...

জান্নাতের জীবন-সংগ্রাম