গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আবারও ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে। শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে একাধিক স্থানে বোমাবর্ষণের ফলে উত্তেজনা বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
শনিবার মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিমান ও ড্রোন হামলায় অন্তত একজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে। তবে হামাস বা ইসলামিক জিহাদ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রবিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল-মাগাজি ও আবাসান আল-জাদিদা এলাকায়ও বিস্ফোরণের খবর প্রকাশ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনারা ওই এলাকাগুলোতে নতুন করে বিস্ফোরক ফেলেছে, যা চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
উল্লেখ্য,যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পরও গাজার ভয়াবহ চিকিৎসা সংকটের কোনও উন্নতি হয়নি। কারণ, ইসরাইল এখনো গাজায় প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি চিকিৎসক প্রতিনিধি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় অনুরোধ করা চিকিৎসা সরবরাহের মাত্র ১০ শতাংশ প্রবেশ করতে পেরেছে।
গাজার স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসা সহায়তা সমন্বয়কারী লেনা দাজানি বলেন, “আমি প্রায় প্রতিটি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, এবং তারা সবাই জানিয়েছেন—১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।”
তিনি বলেন, “এখানে এমন অনেক রোগী আছেন যাদের অন্য যেকোনো দেশে আইসিইউতে থাকার কথা, অথচ তারা এখন মাটিতে ঘুমাচ্ছেন। সাব নামে এক শিশুর মাথার খুলির অর্ধেক উড়ে গেছে ইসরাইলি হামলায়, তবুও তাকে চিকিৎসা ছাড়াই মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা কিছুই করতে পারছিলেন না বরং বলেছিলেন যে তাকে চলে যেতে হবে। কেননা, কোনও চিকিৎসা সহায়তা নেই, বিছানা আসছে না।
এদিকে গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শনিবার জানান, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো রোববার কাতারের রাজধানী দোহায় এ বিষয়ে আলোচনা করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও শনিবার সন্ধ্যায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠকের পর জানান যে, গাজাকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা “অগ্রগতি” করছে। তিনি আরও বলেন, শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই হামলা ও কূটনৈতিক উদ্যোগ একইসঙ্গে চলায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের সাম্প্রতিক অভিযান যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে বলে মনে করছে ফিলিস্তিনি পক্ষ।
গাজার মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরও বিক্ষিপ্ত হামলার কারণে শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে উঠছে।
সূত্র: নিউ আরব