শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিস্থাপকতার জন্য দেয়া ঋণ সরকারি ও আর্থিক খাতের সংস্কারকে ত্বরান্বিত করে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস ২১ দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার নিট ঋণ নিয়েছে সরকার। যা গত অর্থবছরের পুরো ১১ মাসে ছিল ৬৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ কম নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ব্যাপক হারে ঋণ বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এক লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত আসার চেয়ে ঋণ বিতরণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ বিতরণে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর গত এক বছরে এই প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে আলোচ্য তিন মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আড়াই শতাংশেরও কম।
গ্যাস লিকেজ ও দুর্ঘটনা কমাতে নতুন করে ২ হাজার ৭৮১ কিলোমিটার গ্যাসলাইন স্থাপন করবে তিতাস। এজন্য ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ বাড়ানো এবং উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক। এ জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে ২৮ কোটি ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। শনিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে দেশের ১১ জেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় উদ্ধার কাজে হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে। এজন্য দুর্যোগপ্রবণ, দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যকরী উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিশ্বব্যাংকের ঋণে রেসকিউ বোট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তা ও উপকূলীয় এলাকায় জরুরি সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে ৬২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে দক্ষিণ কোরিয়া।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম সঠিক পথে আছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সমঝোতা হয়নি।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরো কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তথ্য রয়েছে।
ব্যাংক খাতে মন্দমানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ শতাংশের বেশি মন্দমানের। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ এখন ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে এই ঋণ বেড়েছে প্রায় সোয়া ১ লাখ কোটি টাকা।
ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি রিপোর্ট যাচাই ব্যতীত ঋণ প্রদান করা হলে একজন গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পরিমাণের একাধিক শস্য ও ফসল ঋণ গ্রহণ করলেও তা ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়ায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ব্যাংক খাতের জালিয়াতি এখনো বন্ধ হয়নি। এই সরকারের আমলেও বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক এলসি বা ঋণপত্র খুলতে বড় ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যোগ্যতা নেই এমন কেউ ব্যাংকের পর্যদে বসতে পারবেন না। সঠিক ঋণের চর্চা হলে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়া লাগবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাড়ে ১৫ বছরে ডজনখানেক ব্যাংকে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে ঋণের নামে কয়েকটি শিল্পগ্রুপ বের করে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
২০২৪ সালেও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণপ্রবাহ কমেছে। গত বছর এ খাতে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার কমেছে। যদিও ২০২৩ সালে তার আগের বছরের তুলনায় কমে ১১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।