অ্যানেসথেশিয়া
১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী অচেতন হয়ে পড়েন এবং সার্জন ডা. জন কলিন্স ওয়ারেন সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। অপারেশনের পর ওয়ারেনের ঐতিহাসিক উক্তি—‘Gentlemen, the patient has felt no pain.’ এই ঘোষণার মাধ্যমেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে সূচনা হয় অ্যানেসথেশিয়া বা চেতনানাশক যুগের।
ব্যথার যুগ থেকে মুক্তি
আগে সার্জারি মানেই ছিল ভয়াবহ যন্ত্রণা ও চরম কষ্টের অভিজ্ঞতা। অ্যানেসথেশিয়ার আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায়, অস্ত্রোপচার হয়ে ওঠে নিরাপদ, মানবিক ও ব্যথামুক্ত। বর্তমানে অ্যানেসথেশিয়া তিনভাবে প্রয়োগ করা হয়—
— লোকাল অ্যানেসথেশিয়া (Local Anesthesia) : শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
— রিজিওনাল অ্যানেসথেশিয়া (Regional Anesthesia) : শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশ, যেমন হাত-পা বা কোমরের নিচের অংশে।
— জেনারেল অ্যানেসথেশিয়া (General Anesthesia) : পুরো শরীর অচেতন করা হয়।
আধুনিক চিকিৎসায় অ্যানেসথেশিয়া
আজ অ্যানেসথেশিয়া শুধু অস্ত্রোপচারেই নয়—প্রসববেদনা নিয়ন্ত্রণ, ব্যথা ব্যবস্থাপনা, আইসিইউ চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক প্রক্রিয়াতেও অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। এর ফলে চিকিৎসা প্রক্রিয়া হয়েছে অনেক বেশি মানবিক, নিয়ন্ত্রিত ও কার্যকর। মানবিক চিকিৎসার জয়যাত্রা ডা. মর্টনের সেই ঐতিহাসিক প্রয়াসের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল