হোম > ফিচার > তারুণ্য

শিক্ষার উন্নয়নে অন্তঃপ্রাণ

ওমর শাহেদ

রকিবুল ইসলাম তৌকির ও আতিক হাসান

করোনাভাইরাসের আক্রমণে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ হয়ে গেল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা সবাই ফিরে গেলেন বাড়িতে। তৌকিররা চলে এলেন শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের ভাইডাঙ্গা অঞ্চলে। একদিন বিকালে ভাইডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসে আলাপে তারা জানলেন, তাদের এলাকা থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ পাওয়ার হার খুবই কম। ফি-বছর দুজন-তিনজন করে ভর্তি হতে পারেন। অথচ স্কুলগুলোয় গিয়ে তারা দেখেন মেধাবী ছাত্রছাত্রী অনেক আছে। এই অঞ্চলে সাত-আটটি স্কুল ও একটি কলেজ আছে। তাহলে তারা ভর্তি হতে পারছেন না কেন? বাবা-মা শিক্ষার বিষয়ে অত সচেতন নন, তারা ছেলেমেয়েদের খুব বেশি পড়ালেখামুখী করেন না। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় দক্ষতা বাড়ানো, বাবা-মাকে বোঝানো ও উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য তারা ‘ডুসাইল’ নামের একটি শিক্ষামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুললেন।

তারা প্রথমে ভাইডাঙ্গা স্কুলে এবং পরে এলাকার সব স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বসলেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবা দেওয়া শুরু করলেন। করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় অনেক ফ্রি সেমিনার করলেন; এখনো বাড়িতে গেলে বিদ্যালয় ও কলেজে ফ্রি সেমিনার করেন। অঙ্ক ও ইংরেজি ফ্রিতে অনলাইনে শেখান। কোভিডের আক্রমণের তীব্রতা কমে গেলে বিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় গিয়ে তারা ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞান ফ্রিতে শিখিয়েছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কী, তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। সেখানে প্রশ্নপত্রের ধরন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা ও মান সম্পর্কে জানাতে শুরু করলেন। খুব কম খরচে সবচেয়ে ভালো লেখাপড়া কীভাবে করা যায় বোঝালেন। এখানে পড়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানালেন, সবচেয়ে ভালো ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু ভর্তি হয়, ফলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস, সরকারি-বেসরকারি ভালো চাকরি প্রভৃতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই পায়।

২০২০ সালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছেলেমেয়েদের প্রথম নবীনবরণ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এবার সুযোগ পেলেন ছয়জন। উৎসাহিত হয়ে ভাইডাঙ্গা এলাকার ছেলেমেয়েদের আরো পরিচর্যা শুরু করলেন। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেল। তারা চলে এলেন যে যেখানে পড়তেন। তবে রোজার ও কোরবানির ঈদ এবং নানা ছুটিতে তারা গিয়ে পড়ান। স্থানীয় সদস্যরা নিয়মানুসারে সংগঠন পরিচালনা করেন এবং দুর্বল, মেধাবী ও অসহায়দের পরিচর্যা করেন। যাদের নবীনবরণ দেন তারাও সংগঠনের সদস্য হয়ে কাজ করেন। এভাবে পরিচর্যা করার ফলে এই বছর ৯ জন সুযোগ পেলেন বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পরের বছর ডুসাইলের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল তার সাফল্যে। টানা পরিচর্যার ফলে ১৪ ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সুযোগ পেলেন। ফলে বড় একটি আয়োজন করলেন তারা বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে নবীনবরণ ও ক্রেস্ট উপহার দিয়ে। সে উৎসবে ইউএনও ও ওসি ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিলেন। এখন ১৫ থেকে ২০ জন প্রতি বছর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করেন।

এই কাজগুলো করতে ডুসাইলের অনেক টাকাপয়সা খরচ হয়েছে। আর্থিক অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে কখনো যাননি। যখনই কোনো কাজে টাকার প্রয়োজন হয়েছে, ছোটখাটো হলে নিজেদের পকেটের পয়সা দিয়ে দায় মিটিয়েছেন। বড় কোনো আয়োজন যেমন নবীনবরণ হলে এলাকার সচ্ছল বড় ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে করেছেন। বড় বড় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে প্রতি বছরই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ লাভ করা অভাবী পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য হাত পাততে হয়েছে তাদের। এই হাত গর্বের। ২০২১ সালে একটি ছেলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটি বিভাগে সুযোগ পেল। ভাত খাওয়ার টাকাও নেই তাদের পরিবারের। পড়ালেখার টাকা পাবে কোথায়? শিক্ষকদের সাহায্যে এ পর্যন্ত এসেছে। সে তার অবস্থা জানানোর পর ডুসাইলের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন শুরু হলো। তার প্রয়োজন ছিল ১৮ হাজার টাকা। দুদিনের মধ্যে ২২ হাজার টাকা জোগাড় হয়ে গেল। আরেকটি ছেলে এভাবে ভর্তি হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২২ সালে এভাবে দুজনকে ভর্তি করানো হয়েছে। ২০২৩ সালে এভাবে একজন ভর্তি হয়েছে।

২০২৫ সালে প্রয়োজনীয়তার কথা ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতার কথা বিবেচনা করে ডুসাইলকে সরকারি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত করার কথা বিবেচনা করলেন কর্মীরা। এটি একটি কাঠামোর মধ্যে আনা যাবে। তবে মূল বিষয় আর্থিক অনটন। ফি-বছরই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু ভর্তির টাকা নেই, এমন ছাত্রছাত্রী থাকে, গ্রামের গরিব মানুষদের সাহায্য করতে হয়, একটি ফ্রি সেমিনার করতে গেলেও ছাত্রছাত্রীদের একটি বিস্কুট অন্তত খেতে দিতে হয়—এমন অবস্থায় রেজিস্ট্রেশনটি করার দিকে পা বাড়ালেন তারা। সভাপতি আতিক হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হলেন রকিবুল ইসলাম তৌকির। একটি ছোট কমিটি দেওয়া হলো। এ বছরের মধ্যে ডুসাইলকে রেজিস্টার্ড সংগঠনে পরিণত করার লক্ষ্য তাদের।

এখন ডুসাইল ট্যালেন্ট হান্ট শুরু করবে। ২৫ নম্বর করে ইংরেজি, বাংলা, অঙ্ক ও সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা। শ্রীবর্দী উপজেলায় যত স্কুল আছে, প্রতিটি থেকে পাঁচজন ছাত্রছাত্রী বাছাই করা হবে। সেরা তিনজনকে ল্যাপটপ, বাইসাইকেল ও ট্যাব উপহার দেয়া হবে। এভাবে তরুণদের মেধাকে বিকশিত করার লক্ষ্য তাদের।

উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান

ডাকসু ঘিরে বিদ্বেষ বিভাজন ও অপরায়নের রাজনীতি

চুয়েটে বিতর্ক উৎসব

দুই ব্যাচের মিলনমেলা

তিনি সবার সেরা

প্রাণটাই দিলেন জিহাদ

স্বপ্নবাজ শিক্ষক

কর্মবীর তরুণ সাগর

এক মানবিক অধ্যাপকের গল্প