হোম > পাঠকমেলা

জবিতে পাঠকমেলার পাঠচক্র

ফাহিম হাসনাত

বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে বই-পত্রিকা যেন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। তরুণ প্রজন্মের হাতে এখন খবরের কাগজের বদলে বেশি দেখা যায় স্মার্টফোন। কিন্তু এই ডিজিটালনির্ভরতা কি আমাদের মননশীলতা ও জ্ঞানচর্চার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে?

এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী পাঠচক্র। ‘আমার দেশ পাঠকমেলা’র উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘দৈনিক পত্রিকা পড়ার গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে কীভাবে একজন তরুণ নিজেকে আরো সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।’

পাঠচক্রটি পরিচালনা করেন ‘আমার দেশ পাঠকমেলা’র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য রাহুল শেখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাঠকমেলার অন্যতম সদস্য আকিব হাসান, শেখ মুন্না, রায়হান আহমেদ, রিয়াদ হোসাইন, সাদমান সাকিব, আবুল কালাম ও আশরাফুল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল কনটেন্টের অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির যুগে আজকের তরুণদের হাতে বই বা পত্রিকার বদলে স্মার্টফোনই বেশি দেখা যায়। খবর, বিনোদন, কিংবা তথ্যের জন্য তারা নির্ভর করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট, ভিডিও বা ছোটখাটো স্ট্যাটাসের ওপর।

মুহূর্তের মধ্যে পাওয়া তথ্যের সহজলভ্যতায় তারা যেন সংবাদপত্রের পাতায় ডুব দেওয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রবণতা সত্যিই কি তাদের জন্য কল্যাণকর? পাঠচক্রে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এ পরিবর্তন মননশীলতা ও জ্ঞানচর্চার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের দ্রুত তথ্য দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেসব তথ্য সবসময় যাচাই-বাছাই করা হয় না। বরং অনেক ক্ষেত্রে গুজব, বিভ্রান্তি বা পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ভ্রান্ত ধারণা, বাড়ছে অসহিষ্ণুতা আর সংকুচিত হচ্ছে বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি। অথচ সংবাদপত্র কেবল খবর দেয় না, বরং তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করে বিশ্লেষণ, প্রেক্ষাপট ও যুক্তির পর্যালোচনা, যা একজন পাঠককে করে তোলে সমৃদ্ধ ও সচেতন।

সভায় আলোচকরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন সাংবাদিকদের ভূমিকার ওপর। তাদের মতে, সাংবাদিকতা শুধু খবর পরিবেশনই নয়, বরং এটি সমাজের প্রতিফলন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাসের দলিল। সংবাদপত্র প্রতিদিনই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে তরুণরা যেমন বর্তমানকে বুঝতে শেখে, তেমনি অতীতের ধারাবাহিকতার সঙ্গেও নিজেদের যুক্ত করতে পারে।

এ বিষয়ে রাহুল শেখ বলেন, ‘পত্রিকা পড়া মানে শুধু খবর পড়া নয়। সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ। এখানে আমরা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা জানতে পারি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের হালচালও ধরতে পারি।

একজন শিক্ষার্থী কিংবা তরুণ নাগরিক হিসেবে কেবল পাঠ্যবই পড়লেই দায়িত্ব শেষ হয় না, বরং প্রতিদিনের চলমান ঘটনাগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমরা যদি সমসাময়িক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, তাহলে বাস্তব জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দৈনিক পত্রিকা আমাদের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শেখায়। আজকের খবরগুলো কালকে ইতিহাস হয়ে যায়। তাই যারা নিয়মিত সংবাদপত্র পড়েন, তারা কেবল তথ্য-জ্ঞানেই সমৃদ্ধ হন না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও অর্জন করেন। তরুণ প্রজন্মকে যদি দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক হতে হয়, তবে তাদের অবশ্যই সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস আমাদের চিন্তাকে শানিত করে, দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে এবং সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ায়।’

শেখ মুন্না বলেন, ‘এখনকার দিনে অনেকেই খবর জানার জন্য শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া এগুলো অনেক ভুয়া তথ্য ছড়ায়। অথচ পত্রিকায় তথ্য আসে যাচাই করে সাংবাদিকদের পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে চাইলে আমাদের সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’

রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘আমার মনে হয়, পত্রিকা হচ্ছে ইতিহাসের প্রতিদিনের খাতা। আজ যা আমরা পড়ছি, ভবিষ্যতে সেটা হয়ে উঠবে ইতিহাস। যদি আমরা প্রতিদিন পত্রিকা পড়ি, তাহলে আমরা কেবল খবর জানব না, সময়ের গতিপথও বুঝতে পারব। সংবাদপত্র আমাদের বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়ায়, দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে।’

সাদমান সাকিব বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর শুধু পাঠ্যবই পড়লেই হবে না, তাকে সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। সেটা সম্ভব নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার মাধ্যমেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা যদি সচেতন হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়বে পুরো সমাজে। এজন্য আমি মনে করি, পাঠচক্রের মতো আয়োজনগুলো আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।’

অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীরা সম্মত হন, যদিও ডিজিটাল মিডিয়া দ্রুততম তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করে, তবু পত্রিকা থেকে আসে গভীরতা, প্রেক্ষাপট ও নিরীক্ষণযোগ্যতা। তাই একে কেবল পুরোনো মাধ্যম মনে করা ঠিক হবে না, বরং এটি তরুণদের সমসাময়িক জ্ঞানের একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

রোজকার গতিময় জীবনে সময় যেন কখনো আমাদের পেছনে ফেলে না দেয়; সচেতনতা জাগ্রত রাখার সহজতম উপায় হলো নিয়মিত পত্রিকা পড়া। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পাঠচক্র সেই বার্তাই জোরালোভাবে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। খবর কেবল সময়-কালের বিবরণ নয়, তা ভবিষ্যতের কথাও বলে।

তরুণরাই সমাজের আলোকবর্তিকা

ইসলামি বইমেলায় কেন্দ্রীয় সদস্যরা

মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে পাঠচক্র

'মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস ও উত্থান-পতনের কারণ বিশ্লেষণ' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

রাংগুনিয়ায় পাঠচক্র অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁয়ে আমার দেশ পাঠকমেলার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কমিটি

রাবিতে ‘আমার দেশ পাঠকমেলার’সেমিনার

সুনামগঞ্জে সিরাত সেমিনার ও দোয়া মাহফিল

হাফেজ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ