চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি যুদ্ধের ময়দান। বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে আছেন সেখানে। সবার মধ্যে উত্তেজনা। চলছে যুদ্ধ। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ যুদ্ধের ময়দানে। তবে অবাক ব্যাপার হলো যুদ্ধে কোনো অস্ত্র ছিল না, ছিল না মানবসৈন্যও। বরং পক্ষ-প্রতিপক্ষ ছিল যন্ত্রচালিত রোবট!
দুটি রোবো গাড়ির মাঝখানে রাখা হয়েছে একটি টেনিস বল। সময় চার মিনিট। এ সময়ের মধ্যে যে করেই হোক, এ বল জড়াতে হবে জালে। এতেও রয়েছে নিয়মকানুন। বল উল্টে গেলে পয়েন্ট যাবে কাটা। শুধু ফুটবল নয়, পাশের মাঠে চলছিল লাইন ফলোয়িং রোবট প্রতিযোগিতা। একে একে রোবটগুলো ছুটছে নির্ধারিত রেখা ধরে—কেউ পার করছে বাঁক, কেউ বা থেমে যাচ্ছে মাঝপথে। পুরো উৎসবজুড়েই ছিল যেন একটি রোবোটিক কাব্যকথা। দাপিয়ে বেড়ানো এ রোবটগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু।
এর শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে, আয়োজন করা হয়েছিল জাতীয় রোবটিক্স ও প্রযুক্তি উৎসব ‘MIE ROBOlution 1.0’। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে দেশের ৪১টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। উৎসবের প্রথম দিনে রোবটিক্স ও অটোমেশন প্রযুক্তির বাস্তব জীবনে প্রয়োগ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন খ্যাতিমান গবেষকরা। শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন রোবটিক্স কীভাবে শিল্পজগতে পরিবর্তন আনছে।
এ উৎসবের আরো এক অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘টেকাথন’, যা দেশে এই প্রথম আয়োজিত অনসাইট হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বিত প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীরা নিজেদের দল নিয়ে প্রযুক্তিগত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্জন করেছেন নতুন অভিজ্ঞতা।
উৎসবের শেষ দিন অনুষ্ঠিত হয় প্রজেক্ট উপস্থাপন, ক্যাড প্রতিযোগিতা ও দাবা প্রতিযোগিতা। পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
রোবো সকারে অংশগ্রহণ করতে আসেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির (আইইউটি) ছাত্র সাদাব জসীম হিশাম। তিনি বলেন, ছোটবেলায় মোটর নিয়ে কাজ করতে গিয়েই এ বিষয়ের প্রতি আমার ভালো লাগা শুরু। এখানে এই প্রতিযোগিতায় এসে খুব ভালো লাগছে। আয়োজন বেশ সুন্দর হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এই রোবট নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণায়ও আগ্রহ আছে আমার।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী ভিকি নন্দীর চোখ আরো সামনে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজেক্ট করতে গিয়ে তিনি রোবোটিক্সের প্রতি তীব্র আগ্রহ বোধ করেন। লাইন ফলোয়িং রোবট ও রোবো সকারে অংশগ্রহণকারী এ শিক্ষার্থী বর্তমানে মানুষরূপী ও যুদ্ধযন্ত্র রোবট নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।
উৎসব উপলক্ষে এমআইই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. প্রসেনজিৎ দাশ বলেন, এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও রোবটিক্স শিক্ষার প্রতি তরুণদের আগ্রহ তৈরি করা, তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ানো এবং একটি মানসম্মত জাতীয় প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটি শুধু একটি ইভেন্ট নয়, বরং প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার প্ল্যাটফর্ম। এ ছাড়া এই উৎসবে দেশসেরা গবেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে তুলবে।
উল্লেখ্য, উৎসবে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য পুরস্কার হিসেবে ছিল মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যেখানে রোবো সকারে চ্যাম্পিয়ন হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজের টিম ব্ল্যাক সেবারস। রানারআপ হয়েছে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ইন্ডাকশন মোটর। লাইন ফলোয়িং রোবটে চ্যাম্পিয়ান লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দল টিম সলভওয়্যার ও রানারআপ কুয়েটের দল লাল কবুতর।