লেখালেখি শুধু শব্দের খেলা নয়; এটি সময়, সমাজ ও আত্মার গভীর সংলাপ। আর এই সংলাপেই নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ লেখক—ফাহিম হাসনাত, মালিহা মেহনাজ ঐশী ও আকরাম খান। সম্প্রতি ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিচার, কলাম এবং কনটেন্ট রাইটার্স’ সংগঠন থেকে মে মাসের সেরা লেখক হিসেবে এই তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি মে মাসের ‘সেরা লেখক’ তালিকা প্রকাশ করে। তাতে প্রথম স্থান অধিকার করেন ফাহিম হাসনাত, দ্বিতীয় স্থান পান মালিহা মেহনাজ ঐশী এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন আকরাম খান। তারা সবাই লেখালেখির মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা, কণ্ঠস্বর ও মননচর্চাকে তুলে ধরছেন নিয়মিত।
‘আমার দেশ পাঠকমেলা’ জবি শাখার সভাপতি ফাহিম হাসনাত এই স্বীকৃতিকে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়, ‘খুবই ভালো লাগছে। একজন তরুণ লেখক হিসেবে এটি এক বিশেষ পাওয়া। শখের বশে লেখালেখি করলেও আজ মনে হচ্ছে, অনেক দূর চলে এসেছি।’
তিনি জানান, লেখালেখির পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। তবে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিচার, কলাম ও কনটেন্ট রাইটার্স’ সংগঠনটি সবসময় ঢালের মতো পাশে থেকেছে। তরুণদের উদ্দেশে তার পরামর্শ—‘প্রচুর লেখালেখি করুন। এতে আপনার মেধা ও চিন্তাশক্তি দুটোই বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে চিনবেন। শুরুতে হোঁচট খাবেন, কিন্তু সিনিয়রদের সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।’
দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মালিহা মেহনাজ ঐশী মনে করেন, লেখা কেবল আত্মপ্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি মানবিক যোগাযোগের একটি রূপ। তার ভাষায়, ‘নিজের লেখাকে এত মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারা এবং স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই আনন্দের। এটি লেখার প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘লেখালেখির মধ্য দিয়ে সময়, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে এক আত্মিক সংলাপ তৈরি হয়, যা আমাকে আরো মানবিক করে তোলে।’ মালিহা বিশ্বাস করেন, লেখা মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার এক অনন্য উপায়। এই প্রাপ্তি শুধু নিজের অর্জন নয়। তাকে যারা অনুপ্রাণিত করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি তার সার্বিক প্রাপ্তি উৎসর্গ করেন।
তৃতীয় স্থান অর্জনকারী আকরাম খান ‘আমার দেশ পাঠকমেলা’ জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমার জন্য গৌরবময় ও আনন্দঘন এক অর্জন। এটি লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা ও নিরন্তর চর্চারই ফল।’ তিনি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান আয়োজকদের প্রতি, যারা তরুণদের ভাবনা ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি লেখা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। আমরা চাই, তরুণ লেখকরা এই শক্তিটা উপলব্ধি করুক। লেখাগুলো যেন কেবল ব্যক্তিগত ভাবনায় না থেকে সমাজের কল্যাণেও ব্যবহৃত হয়, সেই চর্চা গড়ে তোলার প্রয়াসই আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য।’ এই তিন তরুণ লেখক প্রমাণ করেছেন, শব্দ ও চিন্তার সম্মিলিত প্রয়োগে বদলানো যায় নিজের অবস্থান, এমনকি সমাজের মানস-কাঠামোও।